
প্রিন্ট: ১০ মার্চ ২০২৫, ০৭:০১ এএম

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘটেছে এক নারকীয় ঘটনা। ক্যাম্পের একটি মাদ্রাসায় ঘুমন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর বার্স্ট ফায়ার করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে তিন শিক্ষক ও এক ছাত্রসহ নিহত হয়েছেন ছয়জন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১২ জন। কয়েকজনকে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে হামলাকারীরা। জানা যায়, শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে ১২-১৫ জনের একটি সশস্ত্র দল ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদ্রাসার দিকে যায়। এর কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ ও মানুষের আর্তনাদ শোনা যায়। আশপাশের লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে মাদ্রাসার দিকে গেলে দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে ৫ থেকে ৭ মিনিট সময়ের মধ্যে। হামলার ঘটনায় রোহিঙ্গা নেতারা দায়ী করেছেন মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মিকে (আরসা)। তারা বলছেন, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন নিয়ে ইসলামি মাহাস নেতাদের সঙ্গে আরসার বিরোধ চলছিল। অবশ্য পুলিশ রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় আরসার অস্তিত্ব স্বীকার করছে না। পুলিশের মতে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা আরসার নাম ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। ওদিকে অনেক রোহিঙ্গার দাবি, মুহিবুল্লাহ হত্যা ও ঘুমন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হত্যা একই সূত্রে গাঁথা। তারা বলছেন, আরসার সন্ত্রাসীরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
স্মরণ করা যেতে পারে, কিছুদিন আগে কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একদল সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শীর্ষনেতা এবং আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহকে খুন করেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগেও অনেক সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একের পর এক কেন সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে, এর একটি বিশ্বাসযোগ্য উত্তর খুঁজে পাওয়া জরুরি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার বলেছেন, ‘হামলার কারণ এবং কারা হামলা করেছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’ আমাদের বক্তব্য-লাগাতার হামলাগুলোর প্রকৃত কারণ ও দায়ীদের পরিচয় সম্পর্কে দ্রুত নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে সম্ভাব্য পরবর্তী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোখা সম্ভব হবে না। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় ব্যাপকভাবে মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসা চলছে। মাদক ও অস্ত্রকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী গ্রুপ গজিয়ে উঠছে কি না, সেটাও খুঁজে দেখা দরকার। দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রত্যাবাসনপ্রত্যাশী ও প্রত্যাবাসনবিরোধীদের দ্বন্দ্ব কোন পর্যায়ে রয়েছে এবং এ দ্বন্দ্বই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্ম দিচ্ছে কি না, এ ব্যাপারেও গভীর তদন্ত হওয়া দরকার।
উখিয়া ক্যাম্পে ছয় রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় দ্রুত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার কথা বলেছে সংস্থাটি। এ ঘটনায় আমরাও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বস্তুত, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় যথেষ্ট পরিমাণে নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে সামনের দিনগুলোয় ঘটতে পারে আরও সন্ত্রাসী ঘটনা। তবে রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র স্থায়ী সমাধান হলো তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন। বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত হবে, এ ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর চাপ বৃদ্ধি করা। বিশ্বকে বুঝতে হবে, মিয়ানমারের জনগোষ্ঠীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শিকার বা ভাগীদার হতে পারি না আমরা। উখিয়ার হত্যাকাণ্ডের তদন্তকাজ দ্রুত শেষ হওয়া দরকার। তদন্ত শেষে হামলাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসাও জরুরি।