
প্রিন্ট: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৫ এএম

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস আজ। দেশে পঞ্চমবারের মতো সরকারি উদ্যোগে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের জন্ম আজ থেকে ২৮ বছর আগে, ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর। চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এক সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনকে হারিয়ে এ আন্দোলন গড়ে তোলেন। ২০১৭ সালের ৫ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সেদিন থেকে দিবসটি জাতীয়ভাবে পালিত হয়ে আসছে। এ দিবস পালনের মধ্য দিয়ে দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোকে নিরাপদ করার জনদাবি জোরেশোরে উচ্চারিত হয় প্রতিবছর। তবে প্রশ্ন হলো, এর কোনো সুফল জনগণ পাচ্ছে কি না?
দেশে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরছে প্রাণ, আহত হয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন অনেকে। দুর্ঘটনা রোধে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের কথা শুনেছি। কিন্তু তাতে দুর্ঘটনা কমেনি। বন্ধ হয়নি বেপরোয়া যান চলাচল। এতে বোঝা যায়, দুর্ঘটনা রোধের পদক্ষেপগুলোয় অথবা সেসব কার্যকর করার ক্ষেত্রে নানা গলদ রয়ে গেছে। সেসব দূর করা জরুরি।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার উঁচু। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শতকরা ৮০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে বিরামহীন গাড়ি চালনা, অত্যধিক গতিতে গাড়ি চালনা এবং চালকের অসাবধানতার কারণে। একজন চালক একটানা চার-পাঁচ ঘণ্টা গাড়ি চালানোর পর বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় গাড়ি চালাবেন, এটাই নিয়ম। কিন্তু দেশের কোনো চালকই এ নিয়ম পালন করেন না। ফলে একজন ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত চালক যখন গাড়ি চালান, তখন স্বভাবতই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে বেশি। এজন্য মূলত বাস মালিকদের অত্যধিক ব্যবসায়িক মনোভাবই দায়ী। এ প্রবণতা রোধে সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল দুর্ঘটনা রোধে একটি সময়োপযোগী সড়ক পরিবহণ আইন করার। আইন হয়েছে। কিন্তু এর সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির নজির নেই। সড়ক পরিবহণ সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এ সংক্রান্ত কমিটি ১১১টি সুপারিশ করেছিল, যেগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয় দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন ২০১৮ সালের জুনে।
নির্দেশনাগুলো হলো- দূরপাল্লার গাড়িতে বিকল্প চালক রাখা, একজন চালকের পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালানো, চালক ও তার সহকারীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর সড়কের পাশে সার্ভিস সেন্টার বা বিশ্রামাগার তৈরি করা, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা বা সিগন্যাল মেনে পথচারী পারাপারে জেব্রা ক্রসিংয়ের ব্যবহার এবং চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধা নিশ্চিত করা।
এসব নির্দেশ যাতে বাস্তবায়িত হয়, তা দেখতে তিনজন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। দুর্ভাগ্যের বিষয়, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রীর যৌক্তিক নির্দেশনাগুলোরও যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি।
সড়কের নিরাপত্তা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু। অথচ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না বলেই মনে হয়, যে কারণে কমছে না দুর্ঘটনা। আমরা খুব জোর দিয়েই বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রীর ছয় দফা নির্দেশনা, সড়ক পরিবহণ সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এ সংক্রান্ত কমিটির ১১১ সুপারিশের দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে সড়ক পরিবহণ আইন। তা না করা হলে প্রতিবছর ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ পালনের কোনো মাহাত্ম্য থাকবে না।