একটি মর্মান্তিক মৃত্যু
এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সেহেরীন মাহমুদ সাদিয়ার যেভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা খুবই মর্মান্তিক। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় ফুটপাতের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পা পিছলে নালায় পড়ে তার মৃত্যু হয়।
জানা যায়, সাদিয়ার সঙ্গে তার মামাও ছিলেন। সাদিয়া নালায় পড়ে যাওয়ার পর তাকে বাঁচাতে তার মামা নালায় লাফিয়ে পড়লেও স্রোতের কারণে তিনি ভাগ্নিকে খুঁজে পাননি। মুহূর্তেই সাদিয়া পানিতে তলিয়ে যান। এ সময় আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। তারাও নালার এদিক-ওদিক খুঁজে দেখে।
খোঁজ না পেয়ে তখনই খবর দেওয়া হয় ফায়ার সার্ভিসে। দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে এসে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার তৎপরতা শুরু করলেও দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা আবর্জনার স্তূপের কারণে তারা স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছিল না। পরে ফায়ার সার্ভিস ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) দুটি এক্সকেভেটর এনে আবর্জনা পরিষ্কার করতে করতে সামনের দিকে অগ্রসর হন ডুবুরিরা। রাত ৩টার দিকে সাদিয়ার লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল।
এভাবে একজন মানুষ মুহূর্তে লাশ হয়ে যাবে, এটা মেনে নেওয়া কঠিন। নগরীতে এমন ঝুঁকিপূর্ণ নালা বা ‘মৃত্যুফাঁদ’ যাতে না থাকে, সে জন্য বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে; রয়েছে নজরদারির ব্যবস্থা। প্রশ্ন হলো, এত ব্যবস্থা থাকার পরও এমন ঘটনা কী করে ঘটল?
এ ঘটনা প্রসঙ্গে চসিক মেয়র বলেছেন, ‘এখানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। রাস্তায় গর্ত হয়েছে। ফুটপাতের ওপর কাদা জমেছে। বৃষ্টির পর সেই কাদায় পা পিছলে মেয়েটি নালায় পড়ে গেছে বলে আমি শুনেছি। এখানে যারা প্রকল্পের কাজ করছে, তাদের সতর্ক হওয়া দরকার ছিল।’ উল্লেখ্য, ওই এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ হলো সিডিএ।
চসিক মেয়রের অভিযোগ প্রসঙ্গে সিডিএ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানা না গেলেও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও চউকের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন, যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেই নালাটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যে রাস্তা তার বাইরে।
আমরা মনে করি, এভাবে পরস্পরকে দোষারোপের বৃত্ত থেকে সংশ্লিষ্টদের বের হয়ে আসা উচিত। উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট মুরাদপুর এলাকায় নালায় পড়ে নিখোঁজ হন এক ব্যবসায়ী। আজও তার খোঁজ মেলেনি। কাজেই নগরীতে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো অরক্ষিত না রেখে জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত। এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিটি কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে, যাতে এমন দুঃখজনক ঘটনা আর একটিও না ঘটে।