দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে আজ। করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ ছিল দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর ফলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। গত দেড় বছরে কয়েকবারই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় সেসব ঘোষণা বাস্তবায়িত হয়নি। এবার সত্যি সত্যি খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যবিধি মানা সাপেক্ষে আজ খুলে দেওয়া হচ্ছে দেশের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় তিন কোটি ছাত্রছাত্রী রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠদানের জন্য এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত না হলেও দেশের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই পাঠদানের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠান আজ থেকে ছাত্রছাত্রীদের সরব উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা হচ্ছে। এসব নির্দেশনা মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলাকালে স্বাস্থ্য সুরক্ষাসংক্রান্ত নিয়মাবলি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া ও প্রতিদিন তাপমাত্রা মাপা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দুটি স্তরে এসব মনিটর করা হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই দৈনিক আসবে দুটি আলাদা মনিটরিং প্রতিবেদন। এ ছাড়া শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে অন্তত ৮০ শতাংশকে এক ডোজ টিকা নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন যুগান্তরকে বলেছেন, সরকারের কাছে প্রধান অগ্রাধিকার ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা। সেটিকে সামনে রেখে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় পুনরায় লেখাপড়া শুরুর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষায় নির্দেশিত পন্থায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষে বসানোর ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। অবশ্য আজ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলো খোলার সিদ্ধান্ত কার্যকর হলেও প্রশ্ন থেকে যায়-করোনা সংক্রমণ যদি আবারও বেড়ে যায়, তাহলে কী হবে? এ প্রশ্নের উত্তরও ঠিক করা আছে। করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সুপারিশ করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় বন্ধের সিদ্ধান্ত নেবে, আমরাও সেভাবেই পরামর্শ দেব। আবার কোনো বিশেষ উপজেলায় করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করলে উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার পাঠদান সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করতে পারবে। অর্থাৎ আমরা দেখছি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি এতদসংক্রান্ত সর্বদিক বিবেচনা করেই নেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব চিন্তার বাস্তব প্রতিফলন যাতে ঘটে, সেদিকে পূর্ণ আন্তরিকতা থাকতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের চাঞ্চল্য লক্ষ করা গেছে গত কয়েক দিনে। স্কুল ড্রেস ও ব্যাগ থেকে শুরু করে শিক্ষাসামগ্রী কেনার ধুম পড়ে গিয়েছিল গত সপ্তাহে। এই কর্মচাঞ্চল্য শিক্ষার প্রতি ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের আগ্রহ ও অনুরাগই প্রমাণ করে। বস্তুত, গত দেড় বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে, তা পূরণ করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সম্মিলিতভাবে। সবচেয়ে বড় কথা, স্বাস্থ্যবিধি মানার যে বিষয়টি বারবার আলোচিত হচ্ছে, তার প্রতি থাকতে হবে শতভাগ দায়িত্বশীলতা। এই দায়িত্ব শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবারই।