হাটহাজারীর পুতা বেগুন

ড. মো. জামাল উদ্দিন
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফাইল ছবি
নামে বেগুন হলেও পুষ্টিতে রাজা, খেতে পারি তরকারিতে খেতে পারি ভাজা! বেগুনের রয়েছে হরেকরকম পুষ্টিগুণ। যদিও অনেকে রসিকতা করে বলে থাকেন-যার নাই গুণ, তার নাম বেগুন। আসলে কি তাই? উক্তিটি পুরোপুরি মিথ্যা। ভিটামিন এ, সি, ই, আর আয়রনের সমাহার বেগুনে। এটি শক্তিশালী একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও বটে। প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকায় এটি রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ থাকায় চোখের পুষ্টি জোগায়, চোখের যাবতীয় রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।
বেগুনে থাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম, যা দাঁত ও হাড়ের জন্য বেশ উপকারী। যারা নিয়মিত বেগুন খায়, তাদের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় কম বলে পুষ্টিবিদরা মনে করেন। পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্রের ক্যানসার প্রতিরোধ করার এক অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে বেগুনের। মুখ ও ঠোঁটের কোণের কিংবা জিহ্বার ঘা দূরীকরণে এটি রিবোফ্ল্যাবিনের কাজ করে। বেগুনে আছে প্রচুর পরিমাণ ডায়াটারি ফাইবার, যা হজমে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। যাদের রক্তে খারাপ ধরনের কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি, তাদের বেগুন খাওয়া ভালো। তবে যাদের গেঁটে বাত, অ্যাজমা বা অ্যালার্জি আছে, তাদের বেগুনে খানিকটা বিধিনিষেধ আছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এ যাবৎ বেগুনের ১১টি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে বারি বেগুন-৩ এবং বারি বেগুন-৪ হাইব্রিড জাতের বেগুন। বারি উদ্ভাবিত বেগুনের জাতের বাহারি নামও রয়েছে যেমন-উত্তরা, তারাপুরি, কাজলা, নয়নতারা। আর পুতা বেগুনটি হলো চট্টগ্রামের হাটহাজারীর স্থানীয় একটি উন্নত জাতের বেগুন, যা কৃষকরা ব্যাপক আকারে চাষ করে থাকেন। স্থানীয় ভাষায় একে পুতা বাইঅন (বেগুন) বলে। পুতু থেকে পুতার উৎপত্তি বলে মুরব্বি কৃষকরা জানান। চট্টগ্রামের মানুষ বাচ্চাদের আদর করে পুতু বা পুতুইন্না বলে ডাকে। এ বেগুনটির আকার ছোট ও দেখতে সুন্দর বিধায় একেও আদর করে পুতা বেগুন বলে। তবে বারি ভবিষতে এটি জাত হিসাবে বের করলে কী নাম দেয় সেটা দেখার বিষয়। জাতের নামকরণের সঙ্গে স্থানীয় নামটা যেন মুছে না যায়, তা বিবেচনা করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক বিজ্ঞানীদের বারবার তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন। সেটিও বিবেচনাযোগ্য।
হাটহাজারীর এ পুতা বেগুনের চাহিদা ব্যাপক। দামও বেশি। কারণ এটা রান্না করলে তরকারির স্বাদ বহুগুণ বেড়ে যায়। একটু মিষ্টি মিষ্টি স্বাদ। চট্টগ্রামের মানুষ শুঁটকিপ্রিয়। ছুরি শুঁটকির সঙ্গে এ বেগুনের জুড়ি মেলা ভার। আর খাইস্সার (শিমের বিচি) সঙ্গে চিংড়ি আর পুতা বেগুনের মজাই আলাদা। ইলিশ মাছের সঙ্গে পুতা বেগুনের তরকারির ঝোল না খেলে এর স্বাদ বর্ণনা করা যাবে না। এ বেগুন কৃষকের পারিবারিক আয় বাড়ানোর একটি অন্যতম হাতিয়ার। কারণ এর ফলন যেমন বেশি, তেমনি বাজারের অন্যান্য বেগুনের চেয়ে এর বিক্রিমূল্যও অনেক বেশি। সুতরাং এটি নিঃসন্দেহে একটি সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল। এরকম একটি লাভজনক ফসলকে গবেষণার মূলধারায় নিয়ে আসা উচিত। এটির উৎপাদনশীলতা (ফলন) গড়ে প্রতি হেক্টরে ৪৩.৬১৮ মেট্রিক টন। গবেষণার মাধ্যমে উন্নত ব্যবস্থাপনা দিলে এটি আরও অধিক উৎপাদনশীল হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সম্ভাবনাময় এ ফসলটি মানসম্মত গবেষণার মাধ্যমে কৃষকের জন্য একটি আয়বর্ধক সবজি হিসাবে আবির্ভূত হোক, এ প্রত্যাশা করছি।
ড. মো. জামাল উদ্দিন : কৃষি অর্থনীতিবিদ; ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম
jamaluddin1971@yahoo.com