বিধিনিষেধ নেই, নেই স্বাস্থ্যবিধিও
এভাবে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২১, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঈদের কয়েকদিন ছাড়া টানা প্রায় চার মাস কঠোর বা শিথিল বিধিনিষেধের মধ্যে ছিল দেশ। গত বুধবার ভোর থেকে সেই বিধিনিষেধ উঠে গেছে।
আর তাতেই পুরোনো চেহারায় ফিরেছে সমগ্র দেশ। সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিসসহ সব শিল্পকারখানা খুলেছে। শপিংমল, মার্কেট, দোকানপাট-বিপণি বিতান, হোটেল-রেস্তোরাঁ চালু হয়েছে। সড়কে মানুষ বেড়েছে কয়েকগুণ। শতভাগের বেশি যাত্রী নিয়ে চলেছে গণপরিবহণ।
সিএনজি অটোরিকশা, পণ্যবাহী ছোট ও মাঝারি ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত ছোট-মাঝারি-বড় গাড়ি রাস্তায় নেমেছে। শুরু হয়েছে আগের মতো যানজট। এক কথায় বললে, আমরা সবাই এখন চিরচেনা বাংলাদেশে বাস করছি। মনেই হচ্ছে না যে, কোভিড-১৯ নামের এক ভয়ংকর মহামারির কবলে রয়েছে দেশ।
আশা করা হয়েছিল এবং নির্দেশনাও ছিল, বিধিনিষেধ উঠে গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে সবাই। কিন্তু সে গুড়ে বালি। বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার প্রথম দিনেই অর্থাৎ বুধবার রাজধানীতে বাসে গাদাগাদি করে মানুষ চলাচল করেছে। বেশিরভাগ বাসে যাত্রীদের স্যানিটাইজার দেওয়া হয়নি, ট্রেন-লঞ্চেও ছিল একই অবস্থা। ছিল না সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার প্রবণতা। রাস্তায় নামা অধিকাংশ মানুষের মুখে ছিল না মাস্ক। অর্থাৎ প্রায় সর্বত্রই উপেক্ষিত হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণ যে আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।
দেশের করোনা পরিস্থিতি মোটেও ভালো নয়। প্রতিদিনই আড়াইশর কম-বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন। সংক্রমণের হার যদিও কিছুটা নিুগামী, শতকরা হিসাবে তা এখন ২৪-২৫। বর্তমানে সমগ্র দেশ যেভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে, তাতে সংক্রমণের এই হার বেড়ে যেতে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আমরা বারবার বলে এসেছি, করোনা অথবা যে কোনো রোগের ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।
দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা যা, তাতে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে তাদের সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এখনই করোনার সব রোগীকে সুচিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না।
অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন অনেকেই। তাই আমরা করোনা প্রতিরোধের ওপর পৌনঃপুনিকভাবে জোর দিয়েছি। আর করোনা প্রতিরোধের উপায় হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত উপায়গুলো মেনে চলা। এই উপায়গুলো হলো-মুখে মাস্ক পরা, ঘনঘন হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং টিকা নেওয়া। দেশে টিকাদান কর্মসূচি চলমান রয়েছে বটে, তবে টিকা প্রদানযোগ্য ১২-১৩ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে।
বস্তুত, দেশে টিকার চাহিদা অন্তত ২৫ কোটি। সে তুলনায় আমাদের হাতে রয়েছে এর ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ। ফলে যতদিন না আমরা সবাইকে টিকার আওতায় আনতে পারছি, ততদিন অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধির ওপর জোর দিতে হবে।
অবশ্য টিকা গ্রহণ করলেই যে স্বাস্থ্যবিধির অন্যান্য বিষয় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে, তা-ও নয়। বস্তুত, মুখে মাস্ক পরার বিষয়টি আমাদের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। আমরা যেমন শার্ট, প্যান্ট, শাড়ি পরি, পায়ে পরি স্যান্ডেল অথবা জুতা, তেমনি মাস্ক পরিধানকেও নিয়মের অন্তর্গত করে ফেলতে হবে।
সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টিকেও দেখতে হবে অতি গুরুত্বের সঙ্গে। জীবিকার স্বার্থে সব সময়ের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা যেহেতু বাঞ্ছনীয় নয়, সেহেতু বেঁচে থাকতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।