Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

বাস্তব কখনো কখনো নাটকের চেয়ে নাটকীয়

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাস্তব কখনো কখনো নাটকের চেয়ে নাটকীয়

অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে সে গর্তে নাকি নিজেকেও পড়তে হয়। পরীমনির গ্রেফতারে প্রবাদটি আবারও প্রমাণিত হলো। পরীমনি ব্যবসায়ী নাসিরকে এক হাত দেখে নেওয়ার জন্য একটি গর্ত খুঁড়েছিলেন। গর্তটি ‘ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা’। ওই মামলার তদন্তে পরীমনির অভিযোগের সত্যতা তো মিলেনি (সূত্র : গণমাধ্যম), উল্টো পরীমনিই এখন বিপুল দেশি-বিদেশি মদ-মাদকসহ মাদকের মামলায় গ্রেফতার।

অবশ্য এ গ্রেফতারটা আগেও হতে পারত। কারণ মদ ও মাদকের সঙ্গে পরীমনির সখ্যের বিষয়টি ১৩ জুনই প্রকাশ্যে আসে। ওইদিন পরীমনি ফেসবুকে তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনেন। রাতে ডাকেন প্রেস কনফারেন্স। সেখানে পরীমনি নাসিরের বিরুদ্ধে জোর করে মদ গেলানোর অভিযোগ তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলেন-‘আমার গলা জ্বলে যাচ্ছিল। ভাবছিলাম আমি মরে যাচ্ছি।’ পরদিনও একই গান। ১৩ জুনের প্রেস কনফারেন্স কাভার করতে পরীমনির বাসায় গিয়ে সাংবাদিকদের চক্ষু চড়কগাছ-বাসা তো নয়, এ যেন মদের বার! ওইদিন পরীমনির ‘কান্নাকাটি’ উপস্থিত সাংবাদিকদের যতটা নাড়া দিয়েছিল, তারচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছিল তার বাসায় ডানে-বামে থরে থরে সাজানো দেশি-বিদেশি মদের বোতল। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেতেই প্রশ্ন ওঠে, যার বাসাটাই আস্ত একটা মদের দোকান, তিনি আবার জোরপূর্বক মদ গেলানোর অভিযোগ করেন কী করে? তাছাড়া ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ওই রাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরীমনি ঢগ ঢগ করে গ্লাসের পর গ্লাস মদপান করেছিলেন। যার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক মদ গেলানোর অভিযোগ, সেই নাসির পরীকে থামানোর চেষ্টা করছিলেন। উল্টো পরীমনি তাকে ধমক দিচ্ছেন। পরীমনির মিথ্যাচারের এখানে শেষ নয়। বাসায় থাকা বিপুল মদের বোতল নিয়ে প্রশ্ন উঠলে পরবর্তী সময়ে তিনি জানান, সেগুলো নাকি ‘শোপিস’! এমনকি ক্লাবে গিয়ে মদ খাওয়া তো দূরের কথা, ভদ্রমহিলা (!) নাকি কখনো ক্লাবেও যাননি।

অথচ বোট ক্লাবের ইস্যুতে মামলার পরই জানা যায়, ওই ঘটনার এক দিন আগে তিনি মাঝরাতে গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে সদলবলে মদপানের জন্য হানা দেন এবং কাঙ্ক্ষিত মদ না পেয়ে সেখানে ভাংচুর ও কর্মচারীদের মারধর করেন। ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ থাকার পরও পরীমনির মিথ্যাচার, এসব নাকি ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা!

সত্যি পুরো ঘটনায় তার ‘নাটক’ দেখার মতো। তিনি পর্দায় যতটা না অভিনেত্রী, বাস্তব জীবনে তার চেয়ে বহুগুণ নিপুণ অভিনেত্রী। ১৩ জুন প্রেস কনফারেন্সের নামে কী ‘লাইভ অ্যাকটিং’টাই না তিনি জাতিকে দেখালেন! তার চোখের জল নিতান্ত কঠিন হৃদয় বা অবিশ্বাসীর মনকেও আর্দ্র করে দিয়েছিল। টিভি স্ক্রিনে তার বুকফাটা কান্না-আর্তনাদ, তার উচ্ছৃঙ্খল-বেসামাল-বেপরোয়া লাইফস্টাইল সম্বন্ধে যারা অবগত, তাদেরও সহানুভূতিশীল করে দিয়েছিল। সেই একই খেল আবারও দেখানোর চেষ্টা করলেন গ্রেফতারের আগে ৩১ মিনিটের ‘ফেসবুক লাইভ’ নাটকে। এবারও আগের স্ক্রিপ্ট-‘ভাই, আমাকে বাঁচান।’

জানালা দিয়ে তাকালেই দেখা যাচ্ছে, পুলিশ-র‌্যাবের গাড়ি। সঙ্গে মিডিয়া ও অসংখ্য উৎসুক জনতা। দরজার ‘লুকিং-গ্লাস’ দিয়ে তাকালে দেখা যাচ্ছে, ড্রেস পরিহিত র‌্যাবের লোকজন। তারা কলিং বেল দিচ্ছেন। পুলিশ বা র‌্যাব পরিচয় দিয়ে বারবার দরজা খোলার অনুরোধ জানাচ্ছে। তারপরও উনি নাকি বুঝতে পারছেন না, কে এসেছে। দরজা না খুলে উলটো ফেসবুকে এসে সাহায্যের জন্য চিৎকার-কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছেন-তাকে নাকি মেরে ফেলতেছে, তার ঘরে নাকি ডাকাত পড়েছে....। দিনদুপুরে (বিকাল ৪টা), নিচে অসংখ্য মানুষ। আর উনি বলছেন, ‘ডাকাত এসেছে’! সেলুকাস, তুমি কোথায়!

আফতাব উদ্দিন ছিদ্দিকী রাগিব : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট

aftabragib2@gmail.com

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম