তথ্য প্রকাশে এনজিওগুলোর অনীহা: টিআইবির সুপারিশ মেনে চলতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২১, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বৃহস্পতিবার ‘তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ চর্চার মূল্যায়ন’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, নিজস্ব ওয়েবসাইটে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে তথ্য প্রকাশে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সন্তোষজনক অবস্থানে থাকলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) অবস্থান উদ্বেগজনক। এতে আরও বলা হয়েছে, আইনি বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতিসংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশে এনজিওগুলো গোপনীয়তার আশ্রয় নিচ্ছে।
১৫৩টি সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ৩৯টি এনজিওর ওপর গবেষণালব্ধ প্রতিবেদনটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব রয়েছে বলে দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানকেই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সব ধরনের মাপকাঠি অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে, তবে সেগুলোর আরও অগ্রগতি ও উন্নতির সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে এনজিওগুলো সন্তোষজনক অবস্থানে নেই, এটা অত্যন্ত হতাশাজনক। শুধু তাই নয়, প্রায় ৯৫ শতাংশ এনজিওর অবস্থান উদ্বেগজনক।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সহজে তথ্য পেতে ১১টি সুপারিশ করেছে টিআইবি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রকাশ ও প্রচার নির্দেশিকা প্রণয়ন এবং তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে, নির্দেশিকার কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে তদারকি বাড়াতে হবে, তথ্য অধিকার আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত আবেদনে তথ্যের ধরন বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তথ্যের ঘাটতি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণ ও তা ওয়েবসাইটে প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে, প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত তথ্য ও কার্যক্রম সম্পর্কিত অভিযোগ দায়েরের জন্য ওয়েবপেজে সুনির্দিষ্ট স্থান রাখতে হবে এবং অনলাইনের মাধ্যমে কার্যকর নিষ্পত্তি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বলা বাহুল্য, তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল সাধারণ মানুষ যাতে কোনো বিষয়ে অবাধে তথ্য পেতে পারে, সেই সুবিধা নিশ্চিত করতে। দেশের এনজিওগুলো যে এই আইনের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে তথ্য প্রকাশে অনীহা বা অবহেলা প্রদর্শন করছে, তা দুঃখজনক।
এনজিওগুলো সম্পর্কে অনেক ক্ষেত্রেই দেশের মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এনজিওর অর্থ কীভাবে ব্যয় হয়, টাকা কীভাবে আসে, সেগুলোর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা রয়েছে কিনা, এসব প্রশ্ন উত্থাপিত হয়ে আসছে অনেকদিন থেকেই।
আমরা মনে করি, নিজেদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে তথ্য অধিকার আইনের প্রতি এনজিওগুলোর সম্মান দেখানো উচিত। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তথ্যের গোপনীয়তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা চাইব, তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে টিআইবি যেসব সুপারিশ করেছে, এনজিওগুলো তা সর্বাংশে মেনে চলবে।