সংযোগ সড়কবিহীন সেতু
এসব সেতু নির্মাণের হেতু কী?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২১, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কালীগঙ্গা নদীর ওপর মানিকগঞ্জের সিংগাইর-নবাবগঞ্জ সড়কে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে আড়াই বছর আগে।
ব্রিজটি অনেক আগে নির্মাণ করা হলেও এতদিনেও নির্মিত হয়নি এর সংযোগ সড়ক। ফলে ব্রিজটি কোনো কাজেই আসছে না এবং তাই প্রতিদিন সহস্রাধিক মানুষ শিকার হচ্ছেন চরম দুর্ভোগের। সংযোগ সড়কটি নির্মাণে ধীরগতির কারণে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকলেও এ দিকটায় নজর দেওয়ার মতো কেউ নেই।
জানা গেছে, সংযোগ সড়কটি নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় এর নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রিজের উত্তর পাশের এ সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে। ৩৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কটির এক বছরের কাজ দুই বছরেও শেষ না হওয়ার কারণ আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।
তবে এটাই প্রথম নয়, এর আগেও দেশের বিভিন্ন স্থানে সংযোগ সড়কহীন বহু সেতু তৈরির নজির রয়েছে। বছরের পর বছর অব্যবহৃত থেকে সেগুলো নষ্ট ও পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। জনগণের করের অর্থের এমন অপচয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সড়কের সেতু নিয়ে অন্যরকম ঘটনাও আছে। এমনও ঘটেছে, কৃষক আইল দিয়ে হেঁটে যেতে পারে, এ ধরনের একাধিক স্থানে সংযোগ সড়কহীন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব সেতু নির্মাণ করা হয়েছে কার বা কাদের স্বার্থে? উন্নয়নের নামে মূলত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অসাধু কিছু কর্মকর্তার পকেট ভারি করার জন্যই সেতু নির্মাণের এমন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এমনও দেখা গেছে, মরা খাল ও খাড়ির উপর নির্মিত সেতুগুলো আসলে কালভার্ট; কিন্তু এগুলোকে সেতু হিসাবে দেখিয়ে দ্বিগুণ বরাদ্দ পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় তদন্তের দাবি রাখে।
যে কোনো সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে তা জনগণের কতটা উপকারে আসবে এবং সার্বিক উন্নয়নে কতটুকু ভূমিকা রাখবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। এটা অজানা নয়, সব সরকারের আমলেই একশ্রেণির কর্মকর্তা ঘাপটি মেরে থাকে বিভিন্ন প্রকল্প বের করে কমিশন আদায় করার জন্য।
এরাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদারদের সঙ্গে আঁতাত করে টাকা ভাগাভাগি করে নেয়। অতীতে বিভিন্ন সময়ে পার পেয়ে যাওয়ায় এসব কর্মকাণ্ডে তাদের উৎসাহে ভাটা পড়ে না।
আমরা মনে করি, সেতু, কালভার্ট ও সড়ক উন্নয়নের যে কোনো প্রকল্প পাশ করানোর আগে সেটা কতটা জনকল্যাণে আসবে তা নিরূপণ করতে হবে। একইসঙ্গে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতাও যাচাই করা দরকার। দ্বিতীয়ত, প্রকল্প পাশ হওয়ার পর তা নিয়মমাফিক নির্মিত হচ্ছে কিনা, তা-ও দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।