করোনা ফিল্ড হাসপাতাল
প্রয়োজন জরুরিভিত্তিতে স্থাপনের পদক্ষেপ

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দেশে করোনা মহামারি যখন ক্রমেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে, কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোয় রোগীর স্থান সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছে না; তখন আপৎকালীন চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। এ তাগিদ থেকেই ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন সেন্টারসহ রাজধানীর পাঁচটি স্থানে করোনা ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
একই সঙ্গে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে মানসম্মত বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে করোনার চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ সিদ্ধান্তের প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও দেশের কোথাও এ ধরনের হাসপাতাল এখনো চালু হয়নি। জানা গেছে, এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ।
আপাতত রাজধানীতে একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হবে। সেক্ষেত্রে করোনার চিকিৎসাব্যবস্থায় অপ্রতুলতা থেকেই যাবে। আমরা জানি, করোনা আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের নিয়ে স্বজনরা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছেন একটি আইসিইউ শয্যার জন্য এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন। আইসিইউ দূরের কথা, সাধারণ শয্যাও পাচ্ছেন না অনেকে। এ এক ভয়াবহ বাস্তবতা। এ অবস্থায় দ্রুত ফিল্ড হাসপাতালগুলো স্থাপন করা না গেলে করোনা রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
চেষ্টা ও আন্তরিকতা থাকলে যে জরুরিভিত্তিতেও পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল গড়ে তোলা যায়, এর উদাহরণ গত এপ্রিলে রাজধানীর মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ভবনে স্থাপিত কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল। এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালে রয়েছে- ইমার্জেন্সি শয্যা ৫০, জেনারেল ওয়ার্ড ১৫০, পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ শয্যা ২১২, এইচডিইউ শয্যা ২৫০ এবং আইসোলেশন রুম ৪৩৮টি। হাসপাতালটিতে আরও রয়েছে আরটি পিসিআর ল্যাব, প্যাথলজি ল্যাব, রেডিও থেরাপি সেন্টার, এক্স-রে সুবিধাসহ নানা সুব্যবস্থা। করোনা রোগীর জন্য অক্সিজেনের দরকার হয় বেশি।
তাই এ হাসপাতালের প্রতিটি শয্যায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের জন্য রয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন। হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা দিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সব মিলে এটিকে কোভিড রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল বলা যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ হাসপাতালকে উদাহরণ হিসাবে নিয়ে করোনা ফিল্ড হাসপাতালগুলো দ্রুত স্থাপনের পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।
বর্তমানে অতি সংক্রমণশীল করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এমনভাবে আঘাত হানছে যে, পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে, তা অনিশ্চিত। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বটে। কিন্তু যে হারে গুরুতর করোনা রোগীর সংখ্যা এবং আইসিইউ শয্যার চাহিদা বাড়ছে, সে হারে আইসিইউর ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে করোনার জটিল রোগীদের আইসিইউর চেয়েও বেশি প্রয়োজন হয় উচ্চমাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহের। এজন্য জেলা হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্তসংখ্যক অক্সিজেন সরবরাহের যন্ত্র হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা থাকা প্রয়োজন। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা উচিত।