আইপি টিভির সম্প্রচার
অনুমোদন ছাড়া এগুলো চলছে কীভাবে?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২১, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রচলিত টেলিভিশনের বিকল্প হিসাবে সংখ্যার দিক থেকে আইপি টিভির (ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশন) বিস্ফোরণ ঘটেছে দেশে।
কারিগরি দিক থেকে সহজলভ্য এই টেলিভিশনের অপব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। দেশে এখন হাজার হাজার আইপি টিভির রমরমা সম্প্রচার চলছে। রাজধানী, জেলা, উপজেলা, এমনকি গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে এই টিভি।
এসব টিভির প্রতিনিধি নিয়োগের নামে চলছে অবাধ বাণিজ্য। একইসঙ্গে এসব প্রতিনিধি তাদের নাম ভাঙিয়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে চালাচ্ছে চাঁদাবাজি। কখনো কখনো করছে প্রতারণা।
আইপি টিভির প্রচলন এখন সারা বিশ্বেই। এই টিভি তথ্যপ্রবাহ ও বিনোদনের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু অন্যান্য দেশে আইপি টিভি ইতিবাচকভাবে সম্প্রচার করা হলেও বাংলাদেশে এ ক্ষেত্রে চলছে নৈরাজ্য। এই টেলিভিশনের সঠিক ব্যবহার না হওয়ায় সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই নৈরাজ্য বহুদিন ধরে চললেও সম্প্রতি হেলেনা জাহাঙ্গীরের ‘জয়যাত্রা টেলিভিশনে’র সূত্র ধরে সবার সামনে এসেছে আইপি টিভির মালিকদের নানা অপকর্মের কাহিনি।
প্রশ্ন হচ্ছে, বিষয়টি এত দেরিতে নজরে এলো কেন? এই টিভির নৈরাজ্য বন্ধ করা যায় কীভাবে? এই টিভিকে নিয়মের মধ্যে আনাই বড় চ্যালেঞ্জ। বিস্ময়ের ব্যাপার, কীসের ভিত্তিতে আইপি টিভির লাইসেন্স দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো আইন হয়নি, কীভাবে তা পরিচালিত হবে, সে বিষয়েও নেই কোনো নির্দেশনা। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বলছে, মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোনো আইপি টিভির অনুমোদন দেয়নি।
ওদিকে অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা (২০১৭) ও সংশোধিত ২০২০-এ বলা আছে-আইপি/অনলাইন টেলিভিশনগুলো অনুমতি ছাড়া সংবাদ প্রচার করতে পারবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, আইপি টিভিগুলো যে অনুমতি ছাড়াই সংবাদ বা অনুষ্ঠান প্রচার করছে, এ খবর কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জানা ছিল না?
বলা হয়েছে, প্রচলিত আইন ভাঙলে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারবে। যদি তা-ই হয়, তাহলে এ পর্যন্ত কয়টি আইপি টিভির মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? আইপি টিভি ও সোশ্যাল মিডিয়াসহ ইন্টারনেটভিত্তিক গণমাধ্যমের দেখভালের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি নিউ মিডিয়া উইং খোলার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এর কার্যক্রম এখনো দৃশ্যমান হয়নি। আমরা মনে করি, যত দ্রুত সম্ভব এই উইং খুলে আইপি টিভিগুলোকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনা উচিত। তা না হলে এই টিভিকে কেন্দ্র করে যে সংস্কৃতি তৈরি হবে, তা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে না।