Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

স্মরণ

একজন রোগীদরদি চিকিৎসক

Icon

ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২১, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

একজন রোগীদরদি চিকিৎসক

আজ ২৯ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এমএ কাদেরীর ১৭তম মৃত্যুবাষির্কী। তার পুরো নাম অধ্যাপক ডা. মাজহার আলী কাদেরী; তবে তিনি অধ্যাপক এমএ কাদেরী নামেই সর্বজন পরিচিত। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তৎকালীন আইপিজিএমআরে মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালে আইপিজিএমআরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হলে তিনি প্রথম উপাচার্য হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

অধ্যাপক ডা. এমএ কাদেরীর গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার হাটহাজারী পৌরসভার ফটিকা গ্রামে। তবে তার জন্ম চট্টগ্রামে। তিনি ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষায় স্বর্ণপদকসহ সারা দেশের মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তা সত্ত্বেও সরকারবিরোধী ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে আইয়ুব-মোনায়েম সরকার তাকে স্কলারশিপ থেকে বঞ্চিত করে এবং চার বছরের জন্য উচ্চশিক্ষায় বিদেশ যাওয়া বন্ধ করে দেয়।

তিনি ১৯৬৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৬৮ সালের ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাউস সার্জন, সিনিয়র হাউস সার্জন ও ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ডা. এমএ কাদেরী বিলাত যান এবং এমআরসিপি ডিগ্রি অর্জন করেন। অধ্যাপক এমএ কাদেরী ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

২০০০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় পাবনা-৫ (সদর উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বকুল মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীকালে ওই শূন্য আসনের উপনির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান, উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এমএ কাদেরীর সময় ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) (ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। তার মতো একজন ব্যক্তির সান্নিধ্যে কাজ করে আমি কর্মজীবনে অনেক কিছু শিখেছি। আজ আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তাই এ দিনে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি অধ্যাপক ডা. এমএ কাদেরী স্যারকে এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

তিনি ছিলেন অত্যন্ত গুণী শিক্ষক, চিকিৎসক, রোগীর প্রতি অত্যন্ত দরদি মনের অধিকারী এবং দক্ষ প্রশাসক। শিক্ষক হিসাবে তিনি তার ছাত্রছাত্রীদের অন্তর দিয়ে ভালোবাসতেন, স্নেহ করতেন। কিন্তু শিক্ষার মান ও নীতি-আদর্শের কাছে কোনোদিন আপস করেননি। তিনি রোগীদের প্রতি অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। রাতেও তিনি হাসপাতালে নিয়মিত রাউন্ড দিতেন।

একজন ভালো শিক্ষকের যত গুণ থাকা প্রয়োজন অধ্যাপক ডা. এমএ কাদেরীর মাঝে তার সবগুলো ছিল। তার শিক্ষাদানের পদ্ধতি ছিল অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে বাস্তবে রূপ দিতে অধ্যাপক ডা. এমএ কাদেরীর অবদান অসামান্য। মানবিক গুণাবলিতেও তিনি ছিলেন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব।

বহুগুণের অধিকারী অধ্যাপক এমএ কাদেরীর জীবনাদর্শ আগামী দিনের পথ চলতে সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রেসিডেন্সি কোর্স চালু করেন, এমডি ও ডিএমডি কোর্স চালুর উদ্যোগ নেন। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সফল যাত্রায় অধ্যাপক ডা. এমএ কাদেরীর অবদান অপরিসীম।

তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে গেছেন। তার নীতি ও আদর্শকে অনুসরণ করে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাব-আজকের দিনে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম