আন্তঃক্যাডার বৈষম্য
দ্রুত নিরসন হওয়া উচিত

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার নয় বছরেও সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন না হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। উল্লেখ্য, উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের মতো সব ক্যাডারে সুপারনিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত পদ) পদোন্নতি ও পদসোপান তৈরির বিষয়ে ২০১২ সালে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে কার্যকর উপায় বের করতে সেসময়ে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমামকে প্রধান করে কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করে সবার জন্য ন্যায়সঙ্গত পদোন্নতি ও পদায়ন নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরও এক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে প্রশাসন ছাড়া বাকি ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এসব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অভিযোগ-তারা সুপারনিউমারারি পদোন্নতির সুযোগ না পেলেও প্রশাসন ক্যাডারের সিনিয়র সহকারী সচিব পদের প্রায় সব কর্মকর্তাকে সুপারনিউমারারির সুযোগে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। অথচ সরকারের এ পদে সবার পদোন্নতি পাওয়ার সমান অধিকার থাকার কথা। শুধু পদোন্নতি নয়, সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
বস্তুত ক্যাডার সার্ভিসে প্রশাসন ও পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বেশি। ফলে সরকারি চাকরিতে একটি আন্তঃক্যাডার বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ক্যাডার ভিন্নতার কারণে কেউ বেশি সুযোগ-সুবিধা পাবেন, আর কেউ পাবেন কম-এটা মেনে নেওয়া যায় না। এ বৈষম্যের অবসান হওয়া জরুরি। নয়তো বিভিন্ন ক্ষেত্রে পড়বে এর বিরূপ প্রভাব। প্রথমত, ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈষম্যজনিত ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়া শুভ লক্ষণ নয়। দ্বিতীয়ত, দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী, যারা চিকিৎসক ও প্রকৌশলী হয়ে থাকেন, তারা টেকনিক্যাল ক্যাডার বাদ দিয়ে জেনারেল ক্যাডারে যাচ্ছেন। সম্প্রতি দেখা গেছে, একটি বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের ২৫টি পদের মধ্যে ২০টিই দখল করেছেন চিকিৎসক ও প্রকৌশলীরা। প্রশাসন ক্যাডারেও যাচ্ছেন এমন অনেকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে দেশে মেধাবী চিকিৎসক ও প্রকৌশলীর সংকট দেখা দিতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের অবসান ঘটানো উচিত। এ সংক্রান্ত উদ্যোগ যেন আমলাতান্ত্রিক বেড়াজালে আটকে না যায়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই কাম্য।