Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত রিপোর্ট: সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন দরকার

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত রিপোর্ট: সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন দরকার

রাজধানীর মগবাজারে সংঘটিত বিস্ফোরণ নিয়ে যে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল, তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, জমে থাকা মিথেন গ্যাস থেকেই ঘটেছিল বিস্ফোরণ। এ গ্যাস এসেছে তিতাসের লাইনের লিকেজ থেকে। যে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তার নিচতলায় বেঙ্গল মিটের দোকানে জমা হয়েছিল গ্যাস। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে বর্জ্য ও স্যুয়ারেজ লাইন থেকে আসা হাইড্রোজেন সালফাইডের উপস্থিতিও ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনাস্থলটি প্রকৃতপক্ষে ‘গ্যাস চেম্বারে’ পরিণত হয়েছিল। বিস্ফোরণের জন্য দরকার ছিল একটি মাত্র স্পার্ক বা স্ফুলিঙ্গ।

ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি আগামীতে বড় ধরনের বিস্ফোরণ থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে ছয় দফা সুপারিশ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের তিতাস গ্যাসের ভূগর্ভস্থ পুরোনো লাইনগুলো পরিবর্তন ও নতুনভাবে বিন্যাস করতে হবে। দ্বিতীয়ত, কোনো ভবন বা স্থাপনা নির্মাণের সময় ভূগর্ভে কোনো গ্যাস লাইন নেই মর্মে তিতাস গ্যাস থেকে সার্টিফিকেট নিতে হবে। তৃতীয়ত, সিটি করপোরেশন যখন ড্রেন মেরামত করবে, তখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে খুব সাবধানে কাজ করতে হবে, যাতে গ্যাসের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। চতুর্থত, তিতাস গ্যাসের লাইনগুলো নিয়মিত পরীক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে, যাতে কোনো লিকেজ আছে কিনা বা তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা, সেটা জানা যায়। আর যদি লিকেজ পাওয়া যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তা সরিয়ে ফেলতে হবে অথবা মেরামত করতে হবে। সুপারিশমালায় আরও রয়েছে-বাসাবাড়ি, হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও রান্নাঘরে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন বা বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। গ্যাস লিকেজ থাকলে কোনোভাবেই বৈদ্যুতিক সুইচ, মশা মারার ব্যাট, মোবাইল ফোন ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না, ধূমপানও করা যাবে না।

বড় ধরনের বিস্ফোরণ এড়াতে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে, তা নিশ্চিতভাবেই সুচিন্তিত। বস্তুত, বিস্ফোরণ এড়াতে এই প্রথমবারের মতো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পাওয়া গেছে। এখন দরকার তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন। সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত করতে হলে শুধু তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ নয়, গ্যাস লাইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঠিকাদার ও গ্যাস ব্যবহারকারী সব পক্ষকেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে গ্যাস লাইনের নিয়মিত পরীক্ষা ও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণই পারে এ ধরনের বিস্ফোরণ থেকে আমাদের রক্ষা করতে। তিতাস গ্যাসের ভূগর্ভস্থ যেসব লাইন পুরোনো হয়ে গেছে, সেগুলোরও পরিবর্তন দরকার অবশ্যই। এসব ব্যাপারে কোনো ধরনের উদাসীনতা, অবহেলা বা বিলম্ব কাম্য নয়। আমরা আশা করব, আলোচ্য ছয় দফা সুপারিশের প্রতিটিই অক্ষরে অক্ষরে পালিত হবে। তা না হলে আগামীতে আমাদের আবারও দেখতে হতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত ধ্বংসলীলা ও মৃত্যু।

ফায়ার সার্ভিস তদন্ত রিপোর্ট

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম