
প্রিন্ট: ১১ মার্চ ২০২৫, ০১:৩৮ এএম
উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি: করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ পর্যায়ে যেতে পারে

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ-পূর্ববর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই ১৫ থেকে ২৩ জুলাই সকাল পর্যন্ত লকডাউন তথা বিধিনিষেধ শিথিল করেছে সরকার।
ফলে বৃহস্পতিবার গণপরিবহণ চালু হওয়ার পাশাপাশি শপিংমলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন খুলেছে, তেমনি বাড়ির উদ্দেশে মানুষের ঈদযাত্রাও শুরু হয়েছে। উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, শপিংমল ও দোকানপাটে ভিড় করা মানুষসহ ঘরমুখো মানুষের অনেকের মুখেই মাস্ক নেই; উপরন্তু সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতাও হচ্ছে উপেক্ষিত। এর ফলে করোনা সংক্রমণের হার ব্যাপকভাবে বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি এবং পরবর্তী সময়ে তা রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে সরকার কঠোর লকডাউনের পথ বেছে নিয়েছিল। রাস্তাঘাটে মানুষ ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে পুলিশ ও বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছিল।
এখন ঈদ উপলক্ষ্যে সবকিছু ‘উন্মুক্ত’ করে দেওয়ায় রাজধানীসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক। গ্রামে বসবাসরত মানুষ সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বরাবরই উদাসীন থেকেছেন; উপরন্তু জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শও উপেক্ষা করেছেন। এ অবস্থায় আসন্ন ঈদে মানুষ দল বেঁধে ঢাকা থেকে গ্রামমুখী হওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে কুরবানির পশু কিনতে হাটবাজারে ভিড় করলে সংক্রমণ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছতে পারে।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। সেসময় দেশে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ছিল। অফিস-আদালত, কল-কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। চলতি বছরের শুরুতে দেশে করোনা সংক্রমণের হার অনেকটাই কমে এসেছিল।
পাশাপাশি শুরু হয়েছিল করোনার গণটিকাদান কর্মসূচি। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে একপর্যায়ে দেশে দৈনিক করোনা শনাক্তের হার তিন শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছিল। ফেব্রুয়ারির শেষদিকে সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে শুরু করায় পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তবে এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা থাকা উচিত ছিল বলে মনে করি আমরা।
পরিকল্পনাগুলো স্মার্ট, বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক হলে নিশ্চয়ই এখন মানুষকে দুশ্চিন্তায় পড়তে হতো না। এ সংকটকালে দেশের অর্থনীতিতে গতি ফিরিয়ে আনা যেমন জরুরি, তেমনি মানুষ যেন যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পালন ও নিয়মশৃঙ্খলা মেনে ঈদ উদযাপন করে, এ ব্যাপারে সময়োচিত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
করোনায় বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানির পরও সংকট কাটিয়ে নতুন ছন্দে জীবন সাজানোর চেষ্টা করছে মানুষ। এ ধারবাহিকতায় বিভিন্ন দেশে টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে, ইতোমধ্যেই যার সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে বিশ্ববাসী।
বিশ্বজুড়ে টিকা কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিকেই দেশে এ কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছে সরকার, এটি নিঃসন্দেহে সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে বর্তমানে দেশে করোনা পরিস্থিতি যে রূপ ধারণ করেছে, তাতে অনেক কিছুই শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। বিশেষত মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা না হলে দেশে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে, যা মোটেই কাম্য নয়।