প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমগ্র বিশ্বের টেকসই উন্নয়ন কতটা ঝুঁকির সম্মুখীন, তা বহুল আলোচিত। এর প্রধান কারণ, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর দায় নগণ্য হলেও এসব দেশের উন্নয়নই পড়েছে বেশি ঝুঁকির মুখে। এ অবস্থায় এই দেশগুলোর টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে শিল্পোন্নত দেশগুলোকে দায়িত্বশীল হতে হবে; কারণ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য প্রধানত এসব দেশই দায়ী।
বিশ্বনেতারা যেন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দায়িত্বশীল আচরণ করেন- এ বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বারবার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সে জলবায়ুবিষয়ক সম্মেলন ‘ফাস্ট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফাইন্যান্স সামিটের’ (সিভিএফ) উদ্বোধনকালে সেসব কথার পুনরাবৃত্তির পাশাপাশি করোনা মহামারি পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে কোভিড-১৯ মহামারি মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট যোগ করেছে। চলমান ও ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলায় আমাদের অবশ্যই ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
বস্তুত বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি মোকাবিলায় বিশ্ববাসীর কী করণীয়, তা বহুদিন ধরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উচ্চারিত হয়ে আসছে। সিভিএফ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন, সেখানে তিনি প্রথমেই এ বিষয়টির উল্লেখ করে বলেছেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে রাখতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন রোধে প্রতিটি দেশকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য অনুসরণ করতে হবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেছেন, উন্নত দেশগুলোকে সিভিএফ-ভি ২০ গ্রুপের দেশগুলোর সবুজ পুনরুদ্ধারের সুবিধার্থে এবং মূলধনের ব্যয় হ্রাসে অব্যাহত সমর্থন এবং বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে হবে। তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেছেন, তহবিলের প্রবাহ অবশ্যই অনুমানযোগ্য, ভারসাম্যপূর্ণ, উদ্ভাবনী ও বর্ধনশীল হতে হবে। শেখ হাসিনা তার চতুর্থ প্রস্তাবে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জলবায়ু রক্ষায় ধনী দেশগুলোকে অবশ্যই বিদ্যমান অর্থনৈতিক দূরত্ব ঘুচিয়ে সিভিএফ-ভি ২০ গ্রুপের দেশগুলোর সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে।
করোনার কারণে বিশ্বে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। এ মহামারি মোকাবিলায় মানুষ যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখনও বিশ্ববাসীকে সামুদ্রিক ঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বভাবতই উন্নত দেশগুলোর তুলনায় স্বল্পোন্নত ও নিুআয়ের দেশগুলোর মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি।
গতকাল প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার এ বিষয়ক এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে গত বছর দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিতে থাকা মানুষের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মহামারিতে বিশ্বের দুর্বল সম্প্রদায়গুলো বারবার একই বার্তা দিচ্ছে যে, করোনার আগে ক্ষুধায়ই তারা মারা যাবে।
বস্তুত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্বের দুর্বল সম্প্রদায়গুলোর সব ধরনের ঝুঁকি যে আরও বহুগুণে বেড়ে যাচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য। কাজেই এ বিষয়ক সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্ববাসীর ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস অতি জরুরি। এমন প্রয়াসই আমাদের এই গ্রহের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা পরবর্তী প্রজন্মকে এখনকার চেয়ে ভালো একটি ভবিষ্যৎ উপহার দেবে।