Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সিইজিআইএসের পূর্বাভাস: নদীভাঙন রোধে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সিইজিআইএসের পূর্বাভাস: নদীভাঙন রোধে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে

সরকারের ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ১৩ জেলা ভয়াবহ নদীভাঙনের কবলে পড়তে পারে। পদ্মা, গঙ্গা ও যমুনা নদীর ভাঙনে এসব জেলার প্রায় ২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিলীন হতে পারে।

বাস্তবে অন্য আরও কিছু নদীতে দেখা দিতে পারে ভাঙন। বিষয়টি উদ্বেগের। সিইজিআইএসের এ গবেষণালব্ধ পূর্বাভাস এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। গত বছর প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, প্রায় ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। বাস্তবে আরও বেশি প্রায় ৩৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে।

বস্তুত নদীমাতৃক এ দেশের এক বড় সমস্যা নদীভাঙন। সিইজিআইএসের সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৯৭৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশের ১ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এর ফলে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ১৭ লাখ ১৫ হাজার মানুষ।

একটি বিখ্যাত গান হলো-‘নদীর একূল ভাঙে ওকূল গড়ে এই তো নদীর খেলা’। কিন্তু বাস্তবে জেগে ওঠা নতুন ভূমির পরিমাণ ভাঙনের ফলে হারানো ভূমির তুলনায় অনেক কম। যেমন, উল্লিখিত সময়কালে জেগে উঠেছে মাত্র ৫৮১ বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি। আমাদের মতো বন্যাপ্রবণ দেশে এ এক নির্মম বাস্তবতা। তবে শুধু বন্যা নয়, অনেক ক্ষেত্রে মানুষের অপরিণামদর্শিতার কারণেও নদীভাঙন ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নদীর গতি রোখার চেষ্টার কারণে নদীভাঙন ঘটতে পারে। অনেক সময় নদীর মাঝখান দিয়ে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, যা ভাঙন সৃষ্টি করতে পারে।

অপরিকল্পিতভাবে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টাও নদীভাঙনের বড় কারণ। এমনিতেই জনবহুল এ দেশে মানুষের তুলনায় ভূমির পরিমাণ কম। তার ওপর প্রতি বছর নদীভাঙনের কারণে আরও কমে যাচ্ছে ভূমি। এর ফলে ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। একদিকে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি, আরেক দিকে নদীভাঙন দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সীমাহীন দুর্ভোগের কবলে ফেলছে।

সিইজিআইএসের তথ্যানুযায়ী, নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে যারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে, তাদের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ লোক অর্থের অভাবে নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি করতে না পারায় গৃহহীনে পরিণত হয়। ফলে নদী অববাহিকায় বসবাসকারী মানুষের মধ্যে বাড়ছে দারিদ্র্যের হার। সরকারিভাবে নির্মিত কোনো অবকাঠামো ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া মানে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়। সেক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। কাজেই নদীভাঙন সমস্যার একটি টেকসই সমাধান জরুরি।

নদী গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, বিক্ষিপ্ত কোনো উদ্যোগ নিয়ে নদীভাঙন রোধ করা যাবে না। এজন্য নিতে হবে একটি মহাপরিকল্পনা। নদীভাঙন রোধসহ নদী ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিরুদ্ধে বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ দুর্নীতি দমন করতে না পারলে নদীভাঙন রোধে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। সরকারকে এদিকে কঠোরভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

আরও একটি বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে নদীভাঙনের শিকার এলাকাগুলোর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা ও বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত। নদীতে চর জেগে উঠলে ভাঙনের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এ নতুন ভূমির সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম