নারী চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার
অস্বাভাবিক মৃত্যু বাড়ছে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২১, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর কলাবাগানের একটি বাসা থেকে সোমবার কাজী সাবিরা রহমান লিপি নামে এক চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারের সময় তার রুম ভেতর থেকে বন্ধ থাকলেও পুলিশের ধারণা তাকে হত্যা করা হয়েছে।
তার শরীরের পেছন দিকে ধারালো অস্ত্রের গভীর আঘাতের চিহ্ন ছিল। দরজা ভেঙে যখন তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, তখন ঘরটি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলেছেন, হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে বিছানার জাজিমে আগুন দেওয়া হয়। সাবিরাকে প্রকৃতই হত্যা করা হয়েছে কিনা, তা ময়নাতদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। তবে এটা ঠিক, দেশে হঠাৎ করেই যেন খুনের ঘটনা বেড়ে গেছে।
প্রতিদিনই সংবাদপত্রের পাতায় খুন-খারাবির খবর প্রকাশিত হচ্ছে। গতকালের যুগান্তরে প্রকাশিত অপর এক খবরে জানা যায়, গত ঈদুল ফিতরের দিন মাদারীপুরে ইসমাইল হোসেন ইমন হত্যার ঘটনায় তার গলায় ছুরি চালানোর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তারই প্রেমিকা লাবনী। সম্প্রতি রাজধানীর পল্লবী এলাকায় সন্তানের সামনে বাবা সাহিনুদ্দিনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এসব ঘটনায় বোঝা যায় সমাজে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর
অর্থ হচ্ছে, ভেঙে পড়ছে সমাজের সহনশীলতার সংস্কৃতি। এটি খুবই উদ্বেগজনক প্রবণতা।
বস্তুত নানা কারণেই খুন-খারাবির ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে যেমন রয়েছে জমিসংক্রান্ত বিরোধসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারণ; তেমনি প্রেম, বিয়ে, পরকীয়াজনিত বিভিন্ন পারিবারিক বিরোধের কারণেও হত্যার ঘটনা ঘটছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পারিবারিক বিরোধের কারণে অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়টি লক্ষণীয়। এ ধরনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার বলে আমরা মনে করি।
পারিবারিক বা সামাজিকভাবে কলহ-বিবাদ হতেই পারে, কিন্তু তা যখন খুন পর্যন্ত গড়ায় তখন তা উদ্বেগের কারণ বৈকি। পরিবারের লোকজন ও বন্ধু-বান্ধবদের ঘাতক রূপে আবির্ভাবের কারণ সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে নাগরিক জীবনে পারিবারিক বন্ধন যেভাবে শিথিল হয়ে পড়ছে, তার ফলেই নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটছে বলে মনে করেন অনেকে।
এ ধরনের ঘটনা এড়াতে নাগরিক জীবনে শত সমস্যা সত্ত্বেও অটুট রাখতে হবে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন। অন্যদিকে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হওয়া জরুরি। কারণ অপরাধীর উপযুক্ত সাজা না হলে একই ধরনের অপরাধ সংঘটনে উৎসাহিত হন অন্যরা।
এর ফলে অবনতি হয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির। আমরা আশা করব, কাজী সাবিরা রহমান লিপির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ দ্রুতই উদ্ঘাটিত হবে এবং তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে থাকলে খুনিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হবে।