করোনা নিয়ন্ত্রণে সীমান্ত বন্ধ: বিকল্প পথে অনুপ্রবেশও রোধ করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২১, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সঠিক বলেই মনে করি আমরা। ভারতে কয়েকদিন ধরেই করোনা রোগী শনাক্তে বিশ্বরেকর্ড তৈরি হচ্ছে। উল্লেখ্য, সেখানে পাঁচদিন ধরে তিন লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যু।
হাসপাতালে শয্যার সংকট, অক্সিজেন সংকটসহ নানা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। রোগীকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছেন স্বজনরা। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন (স্ট্রেইন) এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী হতে পারে। সেক্ষেত্রে এই নতুন স্ট্রেইন বাংলাদেশে প্রবেশ করলে এ দেশেও করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
এ পরিস্থিতি এড়ানোর সবচেয়ে বড় উপায় হলো আকাশপথ ও স্থলসীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া। এ পরিপ্রেক্ষিতে রোববার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থলসীমান্ত দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ফলে এ পথে ভারত থেকে কেউ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে পণ্য চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। অন্যদিকে ভারত দুদেশের মধ্যে বাবল ফ্লাইট আগেই বন্ধ করেছে। এখন স্থলসীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে কার্যকর করতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিডি) ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষগুলোকে বিশেষভাবে তৎপর হতে হবে।
উদ্বেগের বিষয় হলো, ইতোমধ্যেই বিভিন্ন বিকল্প পথে মানুষ ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত অর্থহীন। এ অনুপ্রবেশ রোধ করতে হবে কঠোরভাবে। এটি ঠিক, বাংলাদেশের তিনদিক ঘিরেই রয়েছে ভারতের সীমানা।
এই দীর্ঘ সীমানা নজরদারিতে রাখা কঠিন বটে। তবে যত কঠিন কাজই হোক, বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারিতে সীমান্ত পাহারায় সর্বাত্মক প্রয়াস নেওয়ার বিকল্প নেই। করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এক দেশ কর্তৃক অন্যান্য দেশের ওপর এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।
বস্তুত যেসব দেশ করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে, তারা শুরু থেকেই তাদের দেশে বহিরাগতদের প্রবেশের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে সুফল পেয়েছে। আমরাও যদি করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে আমাদের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলো বন্ধ করে দিতাম, তাহলে দেশের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিত না বলে মনে করেন বিশেজ্ঞরা।
বস্তুত আমাদের সব কিছুতেই শিথিলতা। দেশে আইন রয়েছে, কিন্তু তার যথাযথ বাস্তবায়ন নেই; সরকার থেকে নানা ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, কিন্তু তার বাস্তবায়ন লক্ষ করা যায় ন। সরকার ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করেছে, কিন্তু রাস্তাঘাট, হাটবাজার, ফেরি-কোথাও এর কার্যকারিতা নেই। জনগণকে মাস্ক পরতে বাধ্য করার কথা বলা হলেও অনেকে মাস্ক না পরেই ঘুরে বেড়াচ্ছে যত্রতত্র।
সামাজিক দূরত্ব মানার বা মানতে বাধ্য করারও বালাই নেই কারও মধ্যে। এই যদি হয় করোনা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের বাস্তব চিত্র, তাহলে এক্ষেত্রে সাফল্য আশা করা বৃথা। সব ধরনের আইন, বিধিনিষেধ ও সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সরকারের দৃঢ় ভূমিকাই কাম্য। সীমান্ত বন্ধের ঘোষণার পর ভারত থেকে বিকল্প পথে যাতে কেউ অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেক্ষেত্রেও কথাটি প্রযোজ্য।