
প্রিন্ট: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৮ এএম
বিদেশে বিনিয়োগ নীতিমালা

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশি বিনিয়োগ নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করে এর ওপর মতামত দিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত মতামত পাওয়ার পর অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। খসড়া অনুযায়ী, কেবল রফতানিকারকরাই বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে এবং বিনিয়োগ-পূর্ববর্তী পাঁচ বছরের রফতানি মূল্যের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করা যাবে। তবে উদ্যোক্তা যদি ঋণখেলাপি বা করখেলাপি হন, তাহলে এ সুবিধা পাবেন না। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক ব্যবসা পরিচালনা, অর্থায়ন এবং বিনিয়োগে দক্ষ ও অভিজ্ঞ মানবসম্পদ না থাকলেও বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হবে না।
এছাড়া খসড়ায় বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদনপ্রাপ্তদের বিনিয়োগ-পরবর্তী সব ধরনের প্রাপ্য যেমন লভ্যাংশ, বেতন, রয়্যালটি, কারিগরি ফি, পরামর্শক ফি ও কমিশন ৯০ দিনের মধ্যে দেশে আনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিদেশে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ নীতিমালা তৈরির বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। বস্তুত সেই সভার সিদ্ধান্তের আলোকেই নীতিমালার খসড়াটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বহির্বিশ্বে বিনিয়োগ যেমন বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রকাশ ঘটাবে, তেমনি এর ফলে নতুন নতুন বাজার দখলের পাশাপাশি মধ্যবর্তী প্রক্রিয়াকৃত পণ্য কম মূল্যে আমদানি ও বিদেশি প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকারের সুযোগও তৈরি হবে। বিনিয়োগকৃত দেশের সম্পদ, কাঁচামাল ও প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার তৈরি হওয়ার কারণে কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্নমুখী সামর্থ্য ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নিজের দেশও নানাভাবে উপকৃত হবে। এছাড়া বিনিয়োগকৃত দেশের বিভিন্ন খাতে কৌশলগত অবস্থান সৃষ্টি হয়, যার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ দেশের সামগ্রিক ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখা যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, বিনিয়োগকৃত দেশগুলো থেকে ব্যবসার মুনাফা প্রত্যাবাসন ও সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠানের রফতানি আয় বৃদ্ধির কারণে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তবে বিদেশে বিনিয়োগ প্রশ্নে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে, যা যৌক্তিক বলেই মনে হয়। দেশে বিনিয়োগের মন্দা চলছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের বিদেশে বিনিয়োগ গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দিয়েছেন কেউ কেউ। প্রকৃতপক্ষে, দেশে শিল্প বিপ্লব ঘটাতে হলে বেসরকারি বিনিয়োগ পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটানো জরুরি। বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হলে স্বাভাবিকভাবেই নতুন শিল্প যেমন গড়ে উঠে না, তেমনি চলমান শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সম্প্রসারণও ঘটে না। এর ফলে কর্মসংস্থানের পথ সংকুচিত হয়, যা মোটেই কাম্য নয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ টাকা বিদেশে নিতে চায়, তা দেশে বিনিয়োগ করলে কর্মসংস্থান বাড়বে, যা আমাদের জন্য খুবই জরুরি।
এর বিপরীতে বিদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ পাচারের আশঙ্কাসহ নানারকম ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে ভুল পদ্ধতিতে কিংবা ভুল খাতে বিনিয়োগ করা হলে তা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষতিসহ সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। খসড়ায় অবশ্য বলা হয়েছে, বিদেশে বিনিয়োগের অর্থ ও লভ্যাংশ দেশে প্রত্যাবাসনে ব্যর্থ হলে তা অর্থ পাচার ও মানি লন্ডারিং অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হবে এবং সে অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হবে।
এ কথা সত্য, দেশের অর্থনীতির বিকাশ ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যেই বিদেশে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টিকে একটি কাঠামোর আওতায় আনতে নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে এক্ষেত্রে সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি আমরা।