খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধিতে কৃষকের কী লাভ?
আকবর হোসাইন
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে দেখা যায়। খেটে খাওয়া মানুষের কাছে নিত্যপণ্যের দাম একটি বড় বিষয়। কারণ ৪০ টাকার চালের দাম বেড়ে ৫৫-৬০ টাকা, ৮০-৯০ টাকার তেলের দাম ১৩০-১৪০ টাকা হতে পারে; কিন্তু তাদের আয়-রোজগার তো আর বাড়ে না। ফলে তারা খাবার কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়। সংবাদপত্রে শিরোনাম হয় ‘বাজারে আগুন’। এ আগুন শুধু বাজারে নয়, সাধারণ মানুষের মনের মধ্যেও জ্বলে।
বাজারে আগুন থাকলেও কৃষকের জন্য কি তা পৌষ মাস? না, পৌষ মাস একশ্রেণির ব্যবসায়ীর, যারা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেলে অনেকেই মনে করেন, কৃষকরা এ থেকে লাভবান হয়। আসলে কৃষকরা লাভবান হয় তখনই যখন তারা ফসল উৎপাদনের পর এর ন্যায্যমূল্য পায়। এছাড়া কৃষক লাভবান হয় না। আমরা সব সময় দেখে আসছি- যখন শাকসবজি, ধান-গম ইত্যাদি উৎপাদন হয়, তখন বাজারে দাম কিছুটা কম থাকে। কিন্তু এই কম থাকার চেয়েও আরও অনেক কম দাম পায় প্রান্তিক কৃষক। এমনও দেখা গেছে, কৃষকরা উৎপাদন খরচই তুলতে পারে না। যে বছর দেখি ফসলের বাম্পার ফলন, সেই বছরই কৃষকের উৎপাদন খরচ নিয়ে টানাটানি লাগে। তাহলে কি মৌসুমে আমরা খুব কম দামে নিত্যপণ্য পাই? কৃষক বিক্রি করে ৩ টাকা কেজি, আমরা কিনে খাই ৩০-৪০ টাকা কেজি। তাহলে ফারাক কোথায়? তাহলে কি পরিবহণ ব্যয়ই এর কারণ? নাকি মধ্য ব্যবসায়ীরা বেশি লাভ করেন?
ধানের মৌসুমে ধানের দাম অনেকটা কম থাকে। কিন্তু এরপর ধীরে ধীরে চালের দাম বাড়তে থাকে কেন? এখানে কি অর্থনীতির ‘চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হলে দাম কমে, আবার জোগানের তুলনায় চাহিদা বেশি হলে দাম বাড়ে’- এই সূত্র কাজ করে? প্রকৃতপক্ষে কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পণ্য কিনে মজুদ করে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে অসামঞ্জস্য সৃষ্টি করা হয়। ফলে দাম বেড়ে যায় পণ্যের। এতে কৃষকের কোনো লাভ হয় না, কারণ এ সময় কৃষকদের কাছে বিক্রি করার মতো ফসল থাকে না। লাভ যা হয় তা অসৎ মজুদদার আর সিন্ডিকেটদের।
মৌসুমের প্রথমে ফসল বিক্রি করে ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করে বছরের বাকিটা সময় চলতে হয় কৃষকদের। প্রযুক্তির উন্নয়নে কৃষি উৎপাদন বেড়েছে; কিন্তু কৃষকদের উন্নতি হয়নি। অভাব-অনটনে দিন কাটে তাদের। ‘বলতে পারো ধনীর মুখে যারা জোগায় খাদ্য/ ধনীর পায়ের তলায় কেন তারা থাকতে বাধ্য?’ সুকান্তের সেই ‘পুরনো ধাঁধার’ উত্তর খুঁজতে হবে। কৃষকরা তাদের শ্রমের, ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবেন বলেই আমরা প্রত্যাশা করি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষের মনের আগুন প্রশমিত করতে কর্তৃপক্ষ সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে- এটাই দেখতে চায় মানুষ।
আকবর হোসাইন : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়