
বলা হয়ে থাকে ‘প্রচারে পরিচিতি, গুণে সমাদর’। প্রতিষ্ঠানের সেবা ও পণ্যকে ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে প্রচারের কোনো বিকল্প নেই। আর এ প্রচারের কাজটিই করে থাকে জনসংযোগ। বর্তমানে দেশে জনসংযোগ একটি ক্রমবর্ধনশীল পেশা। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ যখন বাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ করে, তখন থেকেই গোটা বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি হয়েছে।
এর ফলে প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা এবং পণ্যের বিস্তৃতির জন্য প্রচারমাধ্যমের দ্বারস্থ হতে হয়। ব্যবসার পরিধির সঙ্গে সঙ্গে জনসংযোগেরও প্রসার ঘটছে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিকভাবে অগ্রগতি হওয়ায় এখানে জনসংযোগ ভবিষ্যতে সম্ভাবনাময় একটি পেশা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তার কাছে পণ্য সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরির জন্য জনসংযোগের গুরুত্ব বোধ করছে এবং জনসংযোগ কর্মী নিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। আগে প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা জনবিচ্ছিন্ন ছিল এবং তথ্য প্রদানে রক্ষণশীল ভূমিকা পালন করত। কিন্তু আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতির ফলে বাজারের আকার বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এখন তাদের পণ্য ও সেবাকে প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে এবং পিআর বিভাগ খুলছে। এভাবে তারা প্রতিষ্ঠান ও পণ্যকে টার্গেট জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে পারছে।
আজকের দিনে ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি মানুষ বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংযোগ পদটি আছে এবং অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি দপ্তর গঠন করা হয়েছে। ব্যাংক, বিমাসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানেই এ পদটি ধীরে ধীরে সৃষ্টি করা হচ্ছে। একজন জনসংযোগ কর্মীকে প্রতি মুহূর্তেই প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হয়। প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং বা সুনাম বৃদ্ধির জন্য যোগাযোগের কোনো বিকল্প নেই।
জনসংযোগ পেশার প্রসার, মানোন্নয়ন ও মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালের ২২ জুলাই ‘বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতি’ (বিপিআরএ) প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশে বর্তমানে বেশকিছু পিআর এজেন্সি গড়ে উঠেছে। জনসংযোগ পেশার ব্যাপ্তি ও প্রসারের জন্য-এক. বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে মাস্টার্সে জনসংযোগের ওপর একটি কোর্স পড়ানো হয়।
উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘জনসংযোগ বিভাগ’ নামে পূর্ণাঙ্গ একটি বিভাগ খোলা যেতে পারে। দুই. ব্র্যান্ডিং ও জনসংযোগে যারা কাজ করেন তাদের প্রশিক্ষণের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘পাবলিক রিলেশন্স ট্রেনিং সেন্টার’ খোলা যেতে পারে। তিন. বর্তমানে সরকারের প্রতিটি দপ্তরে জনসম্পৃক্ততা বেড়েছে।
তাই সরকারের প্রতিটি দপ্তর, অধিদপ্তর ও বিভাগে পিআর পদ সৃষ্টি করে জনসংযোগ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এতে অনেকের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হবে। চার. অনেক প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় একজন জনসংযোগ কর্মকর্তা অফিসের অন্যান্য কাজও করছেন। এতে করে জনসংযোগ কাজের ব্যাঘাত ঘটে এবং মনোযোগ নষ্ট হয়। জনসংযোগে যারা কাজ করেন, শুধু জনসংযোগের কাজই তাদের করা উচিত।
পাঁচ. জনসংযোগ কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগের শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দেওয়া উচিত। এতে পেশাদারিত্ব বাড়বে। ছয়. জনসংযোগকে একটি বিশেষায়িত পেশা হিসাবে মর্যাদা দেওয়া উচিত।
সাত. কোনো দপ্তরের অধীনে জনসংযোগকে সংযুক্ত না করে পূর্ণাঙ্গ একটি দপ্তর হিসাবে গঠন করা উচিত। আট. জনসংযোগ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে পরিচিতি বাড়ানো ও স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে জনসংযোগ পেশার ক্ষেত্রে একইরকম নীতিমালা থাকা উচিত। নয়. জনসংযোগ কর্মীদের জন্য দেশে ও দেশের বাইরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
দশ. প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী সভা ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় জনসংযোগকে সম্পৃক্ত করা উচিত। এগারো. বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতিকে আন্তর্জাতিক জনসংযোগ সমিতিসহ বিভিন্ন দেশের জনসংযোগ সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে এবং আইপিআরএর সঙ্গে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতা স্মারক করা যেতে পারে।
মো. বাবুল হোসেন : গবেষক; জনসংযোগ কর্মকর্তা, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়