অর্থ পাচারকারীদের তালিকা তলব: চিহ্নিত করা জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২১, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশ থেকে প্রতি বছর মোটা অঙ্কের টাকা পাচার হচ্ছে, এ তথ্য পুরনো। অর্থ পাচার রোধে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও কেন পাচার বন্ধ হচ্ছে না, এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। বস্তুত, পাচার হওয়া অর্থের বেশিরভাগই যায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে। এ ছাড়া অন্য কী কী উপায়ে টাকা পাচার হয়ে থাকে, তা-ও বহুল আলোচিত।
এ প্রেক্ষাপটে টাকা পাচার রোধে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। বলা হয়ে থাকে, দেশ থেকে এক বছরে যে পরিমাণ টাকা পাচার হচ্ছে, তাতে কয়েকটি পদ্মা সেতু তৈরি করা সম্ভব। গত এক যুগেরও বেশি সময়ে বিভিন্ন দেশে বাড়ি-ফ্ল্যাট ক্রয় ছাড়াও নানা ব্যবসা-বাণিজ্যে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন অনেকে। বহুল আলোচিত পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসেও অনেক বাংলাদেশির নাম এসেছে।
বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে পাচার করা অর্থ সুইসসহ বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে কারা রেখেছে-এর তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, যারা পাচারকারী তাদের বিষয়ে তথ্য প্রকাশে আইনগত কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। আইনানুযায়ী বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ওই তালিকা শুধুই তদন্তের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। আদালত দ্বৈত নাগরিকের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমরা আশা করব, দ্রুত এ তালিকা তৈরির কাজ সম্পন্ন করা হবে।
অভিযোগ রয়েছে, টাকা পাচারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো অবগত থাকলেও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার একটি কারণ হলো প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীদের অনেকেই অর্থ পাচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। অবশ্য টাকা পাচার প্রক্রিয়ায় কেবল রাজনীতিক নন; দেশের অনেক ব্যবসায়ী, সরকারি চাকরিজীবীসহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তি জড়িত, যারা নীতি-নৈতিকতা ও দেশপ্রেম ভুলে গিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন ও করছেন।
এ জন্য সর্বাগ্রে অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করতে হবে, বন্ধ করতে হবে পাচারের ছিদ্রগুলো। বলার অপেক্ষা রাখে না, অর্থ পাচার বন্ধ করা না গেলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নানা রকম বাধা সৃষ্টি হবে। কাজেই আর্থিক খাতের এ ক্ষত নিরাময়ে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও জরুরি।