কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য: শিশুদের সযত্নে আগলে রাখতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীসহ সারা দেশে অনেক দিন ধরেই কিশোর গ্যাংগুলোর দৌরাত্ম্য লক্ষ করা যাচ্ছে। তারা ছিনতাই, ধর্ষণ, লুটপাট, মাদক ব্যবসা, খুন, অপহরণ ও যৌন হয়রানিসহ ভয়ংকর সব অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর বনানীতে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হয়েছে শাকিল গাজী নামের এক কিশোর। পূর্বশত্রুতার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানা গেছে।
উদ্বেগের বিষয় হলো, ছুরি, চাপাতি, ড্যাগার, রামদা, হকিস্টিক ছাড়াও কথিত কিশোর গ্যাংয়ের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। তা ছাড়া এসব কিশোর গ্যাং ‘টর্চার সেল’ গড়ে তুলেছে বলেও খবর রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসব গ্যাংয়ের বেড়ে ওঠার পাশাপাশি আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। ফলে তাদের হাতে নানাভাবে নিগৃহীত হলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। বিষয়টি শুধু অভিভাবক নয়, রাষ্ট্রের জন্যও দুর্ভাবনার।
যারা কিশোর বয়স থেকেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে, তারা যে একদিন শীর্ষ সন্ত্রাসীর খাতায় নাম লেখাবে না; তার নিশ্চয়তা কী? সমাজদেহে ব্যাপকভাবে এ ক্ষত বিস্তারের আগেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের এগিয়ে আসা উচিত। এক্ষেত্রে পরিবারেরও বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করি আমরা।
শিশুরা অসৎ সঙ্গ বর্জনসহ যে কোনো ধরনের লোভ-লালসা, প্রলোভন বা অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকার শিক্ষা যদি জীবনের শুরুতেই পরিবার থেকে পায়, তাহলে অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করা যায়।
আজকাল মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক কিশোর-কিশোরীই বিপথগামী হচ্ছে। তাদের মধ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্তরা কী ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তা ভাবলেও গা শিউরে ওঠে। এসব বখাটে বা কিশোর অপরাধীর হাতে দেশের স্কুল-কলেজগামী কিশোরীরা হরহামেশাই লাঞ্ছিত, অপমানিত ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে।
ক্ষেত্রবিশেষে তাদের উৎপাত ও নিপীড়নের মাত্রা এতটাই প্রকট হয় যে, ভুক্তভোগীদের অনেকেই আত্মহননের পথে পা বাড়ায়। বস্তুত কিশোর অপরাধ বর্তমানে একটি সামাজিক সমস্যা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।
আশার কথা, কিশোরদের মধ্যে সংবেদনশীল আচরণ, সহমর্মিতা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে সরকার দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় এ ধরনের ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। সারা দেশে এ ধরনের ক্লাব প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কিশোর অপরাধ তথা কিশোর গ্যাংয়ের জন্ম ও বিকাশ রোধে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে-এটাই প্রত্যাশা।