ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ হোক
জিএম আরিফ
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আধুনিক বা উন্নত কৃষি প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশের কৃষি। বর্তমান সময়েও কৃষির সঙ্গে অনেক তরুণ-যুবক জড়িত হচ্ছে ভাগ্যের চাকা বদলানোর আশায়। অনেকে শখ করে শুরু করলেও পরবর্তীকালে এ পেশাকে জীবিকা অর্জনের একমাত্র উপায় হিসাবে গ্রহণ করে। অল্প সময়ে লাভবান হওয়ার জন্য কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতির সঙ্গে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে হরেক রকমের রাসায়নিক সার। ফসল যাতে বিনষ্ট না হয় বা পোকামাকড় যাতে আক্রমণ না করে সে জন্য ব্যবহার করা হয় কীটনাশক।
অনেক কৃষক মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করছে, যা মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকারক এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এতে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ধ্বংস করতে গিয়ে ফসলের উপকারী পোকামাকড়ও ধ্বংস হচ্ছে। কীটনাশকের কারণে বহু বিল-হাওড় মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। বহু প্রজাতির পাখি হারিয়ে গেছে। ফসল রক্ষাকারী পোকামাকড় ধ্বংসের কারণে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হচ্ছে।
কৃষিজমি, বিশেষ করে ধানের জমিতে এক সময় শামুক-ঝিনুক ও বিভিন্ন প্রকার ছোট মাছ দেখা যেত? এখন এগুলো একেবারেই অনুপস্থিত? প্রকৃতির লাঙল বলা হয় যে কেঁচোকে তাও এখন আর কৃষিজমিতে পাওয়া যায় না? জমিতে পোকামাকড় খাওয়ার জন্য পাখ-পাখালির বিচরণও কমে গেছে? ফসলের মাঠে ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত ভ্রমর আর মৌমাছির গুঞ্জনও কমে গেছে? এছাড়াও কৃষি পরিবেশে বিদ্যমান নানারকম সরীসৃপ আজ বিলুপ্তপ্রায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিমাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন কৃষিজ ও প্রাণিজ খাদ্যের মাধ্যমে এসব মানবদেহে প্রবেশের কারণে মানুষের হার্ট, কিডনি, লিভার, স্নায়ু ও ত্বক আক্রান্ত হচ্ছে। নানাবিধ ফলমূল রাসায়নিক পাউডার দিয়ে পাকানো হচ্ছে, এমনকি টমেটো পর্যন্ত রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় টসটসে করে পাকানো হচ্ছে। শুঁটকি মাছে ডিডিটি পাউডার ব্যবহার করা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করে এবং জমির উর্বরতা ও পরিবেশ রক্ষায় রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা উচিত।
এসব কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কৃষকদের অবহিত করতে হবে এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে। কৃষককে প্রাকৃতিক উপায়ে বালাইনাশক তৈরি করে কৃষিজমিতে ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে প্রাকৃতিকভাবে বালাইনাশক কীভাবে তৈরি করতে হয় তার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কৃষকের ফসল উৎপাদনে কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা প্রদান করতে হবে, যাতে কৃষক প্রাকৃতিকভাবে পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসল উৎপাদন করতে পারে। পরিশেষে, সব ধরনের কীটনাশকের উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রিতে তদারকি বাড়াতে হবে এবং এসবের যততত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে। কৃষককে বোঝাতে হবে মানবদেহ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য এসব কীটনাশক কতটা ক্ষতিকর। এসব কীটনাশক ছাড়াও যে সুন্দর ও পুষ্টিকর ফসল উৎপাদন সম্ভব তা প্রচার করতে হবে।
জিএম আরিফ : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
gaziarifmannan@gmail.com
