
আধুনিক প্রযুক্তি মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এনে দিয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। ঘরে বসেই এখন যে কোনো মুহূর্তে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে যোগাযোগ করা মামুলি ব্যাপার। বিশাল এ পৃথিবীটাকে রীতিমতো হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। আর এই আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গড়ে উঠছে বন্ধুত্ব এবং মানবিক সহযোগিতার নিত্য-নতুন প্লাটফর্ম।
এমনই একটি প্লাটফর্ম ‘'এসএসসি ৯৯ : গ্রীন হেলথ'। ভার্চুয়াল এ গ্রুপের সদস্যরা মূলত এসএসসি ৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী। একসঙ্গে তারা স্কুলের আঙ্গিনায় পা রেখেছিলেন শৈশবে। বেড়ে উঠেছেন একসঙ্গে। বড় হওয়ার স্বপ্নও বুনেছেন একসঙ্গে। স্কুল পাঠে আনুষ্ঠানিক ইতি টানলেও হয়তো প্রিয় স্কুল মাঠের সবুজ ঘাস আর কাদামাটি এখনও ধরে রেখেছে তাদের পদচিহ্নের স্মৃতি।
বড় হয়ে তাদের কেউ আজ চিকিৎসক, কেউ প্রকৌশলী, কেউ আইনজীবী, কেউ সাংবাদিক, কেউ পুলিশ, কেউ সরকারি কর্মকর্তা, কেউ ব্যাংকার, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ রাজনীতিক; তবে বেশিরভাগই চিকিৎসক। যিনি যে পেশাতেই আছেন তাদের বড় পরিচয়- সবাই এসএসসি ৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাদের হৃদয়টা যেন এক ও অভিন্ন।
সেই আবেগ আর ভালোবাসা থেকেই ফেসবুকের আধুনিক যোগাযোগের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠেছে ‘এভারগ্রিন ৯৯ : গ্রিন হেলথ’ নামে ব্যতিক্রমী এ সংগঠন। হৃদয়ে ৯৯, চলো বন্ধু এগিয়ে যাই সেবা ও মানবিকতার লক্ষ্যে-এ স্লোগান সামনে রেখে এগিয়ে চলেছে সংগঠনটি। ভার্চুয়াল মাধ্যমেই তারা ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের অন্য বন্ধুদের উদ্দেশে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর এ দুঃসময়ে যখন হাতের কাছে ডাক্তার পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে, তখন হাত বাড়ালেই সেবা মিলছে ডাক্তার বন্ধুদের।
সারা দেশের এসএসসি ৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এ গ্রুপে যুক্ত হয়ে পাচ্ছেন বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা। করোনা মহামারীর মতো জরুরি মুহূর্তে পাচ্ছেন চিকিৎসাবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।
এ সংগঠনের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ডা. বশীর আহম্মেদ খান হৃদয় (নিউরো সার্জন, নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, আগারগাঁও, ঢাকা), ডা. ইসলাম রকিব, ডা. খালিদ মাহবুব এবং রাবেয়া খাতুন, মেহেদী হাসান জনি ও মোহম্মদ ফখরুল অন্যতম। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে এসএসসি ৯৯ ব্যাচের যে কেউ চিকিৎসাবিষয়ক যে কোনো সমস্যায় এই গ্রুপে পোস্ট দিলেই সঙ্গে সঙ্গে মিলছে ফ্রি পরামর্শ। রোগের ধরন বুঝে মিলছে চিকিৎসাও। এর মধ্যে ৪০ জন চিকিৎসক যুক্ত হয়েছেন এ কাজে।
এ গ্রুপের প্রধান উদ্যোক্তা ডা. বশীর আহম্মেদ খান হৃদয় জানান, ‘আমরা মূলত সারা দেশের এসএসসি ৯৯ ব্যাচের বন্ধুদের চিকিৎসাসেবা দিতে এ সংগঠনটি গড়ে তুলি। এর মধ্যে দেশজুড়ে ৯৯ ব্যাচের শত শত পরিবার এ গ্রুপ থেকে অনলাইনে ফ্রি পরামর্শ নিয়েছেন। আমাদের এসএসসি ৯৯ ব্যাচের ৪০ জন চিকিৎসক বন্ধু এ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এসব কাজে আমাদের ডাক্তার বন্ধুদের কোনোরকম ক্লান্তি বা জড়তা নেই। তাদের কাছে বন্ধুত্বের মূল্য অনেক। খুব শিগগিরই আমাদের আরও ৬০ জন চিকিৎসক বন্ধু এ কাজে যুক্ত হবেন, যাদের সবাই এসএসসি ৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। আমাদের শুরুটা এক এবং হৃদয়টাও এক। চিকিৎসাবিষয়ক যে কোনো সমস্যায় আমাদের ডাক্তার বন্ধুরা হাজির থাকে সবসময়। আমরা চাই দেশজুড়ে আমাদের এসএসসি ৯৯ ব্যাচের সব বন্ধু ভালো থাকুক।’
চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি সারা দেশের এসএসসি ৯৯ ব্যাচের সব সদস্য সুযোগ পেলেই মিলিত হয় তাদের প্রিয় এ মঞ্চে, যে মঞ্চটি তৈরি হয়েছে বন্ধুত্বের শক্তিতে। বন্ধুর হাতে হাত রাখলে যতটা নির্ভার লাগে- ‘এভারগ্রিন ৯৯ : গ্রিন হেলথ’ যেন সেই নির্ভার এক মঞ্চ সারা দেশের এসএসসি ৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কাছে।
ইমন চৌধুরী : লেখক ও সাংবাদিক