
প্রিন্ট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৯ পিএম

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২০, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড় কাটার ধুম লেগেছে যেন। এ অঞ্চলে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, সন্ত্রাসী তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্য পাহাড় দখল করে বসতি গড়ছে। শুধু তাই নয়, তারা বিক্রি করছে সরকারি পাহাড়ের দখলস্বত্ব।
এভাবে চট্টগ্রামের ১৭টি সরকারি পাহাড়ের সব ক’টিই এখন দখলদারদের দখলে। পরিবেশ অধিদফতর কাউকে কাউকে জরিমানা করছে বটে, কিন্তু তাতে বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটা। জরিমানা দিয়ে অনেকে পুনরায় পাহাড় কাটছে এমন দৃষ্টান্তও রয়েছে। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, জরিমানা দেয়া মানে পাহাড় কাটার বৈধতা পাওয়া।
পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী যুগান্তরকে বলেছেন, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমাদের কথা হল, অভিযান যদি পরিচালনা করা হয়ই, তাহলে পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না কেন? দ্বিতীয় কথা, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে যারা পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত, তাদের ব্যাপারে কী করা হচ্ছে?
নির্বিচারে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন এবং বন-জঙ্গল ও গাছপালা উজাড় করার কারণেই চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঘনঘন পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। পাহাড়ের গায়ে জন্মানো বন-জঙ্গল ও গাছপালা এর অভ্যন্তরীণ বন্ধন মজবুত রাখে। পাহাড় কাটার কারণে সেই বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে পাহাড় ধসের পথ সুগম হয়। পরিণতিতে প্রতিবারই প্রাণ হারায় মানুষ। বস্তুত কিছু মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডের দরুন প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে।
পাহাড়খেকোদের কবলে পড়ে কেবল চট্টগ্রামেই গত এক দশকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে ৩৫টি পাহাড়। সেই সঙ্গে অন্তত ১৫৬টি পাহাড় ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে আছে। নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে শুধু পাহাড় ধস নয়, এর ফলে একদিকে চট্টগ্রাম নগরী দিন দিন শ্রীহীন হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে পাহাড় থেকে নেমে আসা বালিতে নগরীর নালা-নর্দমা ভরাট হওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
২০০৭ সালের মর্মান্তিক পাহাড় ধসের ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি পাহাড় ধসের ২৮টি কারণ নির্ণয় করে ৩৬ দফা সুপারিশ প্রণয়ন করেছিল; কিন্তু সেগুলো আজও বাস্তবায়িত হয়নি। মনে রাখা দরকার, প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে চলে। পরিবেশ রক্ষায় আন্তরিক না হলে আমাদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে সেই দায় শোধ করতে হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেআইনিভাবে পাহাড় কাটা রোধে এবং পাহাড়ে বসবাসকারীদের সুরক্ষায় সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে- এটাই প্রত্যাশা।