‘রিজেন্ট’ সাহেদ গ্রেফতার
বিচার ও সাজা নিশ্চিত করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২০, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
করোনাভাইরাসে সন্দেহভাজন আক্রান্তদের ভুয়া পজিটিভ-নেগেটিভ সার্টিফিকেট দিয়ে প্রতারণা করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম।
বুধবার ভোরে বোরকা পরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত এলাকা দিয়ে নৌপথে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ গ্রেফতার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে, কায়দাকানুন করে দেশের ভিআইপিদের সঙ্গে ছবি তুলে প্রতারণার জন্য নিজের খুঁটির জোর দেখানোর কৌশল নিলেও সব ক্ষেত্রে তা কাজে আসে না। সরকার তার এসব অপকৌশল আমলে না নিয়ে তাকে গ্রেফতার করে অনিয়ম-দুর্নীতি, বিশেষত স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, এটি স্বস্তির বিষয়। এখন দরকার যাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া গড়ে তুলেছিলেন সাহেদ, সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া।
কারণ সাহেদের এ অনিয়ম-দুর্নীতি ও প্রতারণা সামান্য বিষয় নয়; এসবের কারণে ইউরোপের উন্নত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে এবং ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। এমনকি বহির্বিশ্বে দেশের ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছে।
কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি-প্রতারণাকেই বিচার ও কঠোর শাস্তির আওতায় আনার বিকল্প নেই। আর অনিয়ম-দুর্নীতি যখন রাষ্ট্রের ইমেজ সংকট, বিদেশে বসবাসরত নাগরিকদের রুটি-রুজি ও সম্মানে আঘাত হানে, তখন তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার টকশোতে নিয়মিত অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঝড় তোলা একজন ব্যক্তি অগোচরে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট বাণিজ্য, স্কুল-কলেজ খুলে ভুয়া সার্টিফিকেট বাণিজ্য চালিয়ে গেছে এবং জালিয়াতি আড়াল করার জন্য ভিআইপিদের সঙ্গে তোলা ছবিকে আশ্রয় হিসেবে নিয়েছে। এমন জালিয়াতের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত ও বাস্তবায়ন করতে না পারলে মানুষের মনে প্রশ্ন থেকে যাবে এবং আরও প্রতারক-দুর্নীতিবাজ তৈরির আশঙ্কা দূর হবে না।
সাহেদকে গ্রেফতারের বিষয়টি ইতিবাচক; তবে তিনি যেন আইনের ফাঁকফোকর গলে বেরিয়ে যেতে না পারেন, সেটি নিশ্চিত করাই এখন আসল কাজ। তার পেছনে যে রাঘববোয়াল রয়েছে, তা স্পষ্ট হয়েছে তাকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য থেকে। আমরা আশা করব, সরকার স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সাহেদের অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে এবং প্রজাতন্ত্রে ঘাপটি মেরে থাকা তার অপকর্মের সহযোগীদেরও ধরার উদ্যোগ নেবে।
করোনাভাইরাসের আবির্ভাবের পর থেকে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি বেরিয়ে এসেছে। বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কেনাকাটাসহ নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতির খবর প্রায় নিয়মে পরিণত হয়েছে। তবে মহামারীর সময়ে সুরক্ষা সামগ্রী জালিয়াতি, ডাক্তার-নার্স-টেকনোলজিস্ট নিয়োগ-পদায়নে অনিয়ম, সর্বোপরি করোনা পরীক্ষায় ভুয়া সনদ বাণিজ্য সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভুয়া করোনা রিপোর্ট বাণিজ্যে জড়িত দুটি প্রতিষ্ঠান- জেকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গ্রেফতার আশার কথা। জেকেজির ডা. সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফ এবং রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদসহ রিপোর্ট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকার দ্রুত উদ্যোগ নেবে, এটাই কাম্য।