স্মরণ
মরমি কবি বন্দে আলী মিয়া

এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২০, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলার কবি, প্রকৃতির কবি, গণমানুষের কবি বন্দে আলী মিয়া। অসংখ্য কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ, উপন্যাস লিখে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন তিনি। মা-মাটি-মানুষের প্রতি দরদ ফুটে উঠেছে তার সৃষ্টিকর্মে। গ্রাম নিয়ে তার অমর কবিতা ‘আমাদের গ্রাম’ পড়লে পাঠককে অবশ্যই ফিরে যেতে হবে শৈশবে, যেখানে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা।
এ কবিতার কয়েকটি লাইন তুলে ধরছি: ‘আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর/থাকি সেথা সবে মিলে কেহ নাহি পর/পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই/একসাথে খেলি আর পাঠশালে যাই।’ প্রকৃতির প্রতি কবির অকৃত্রিম দরদ ফুটে উঠেছে তার ‘কলমিলতা’ কবিতায়: ‘বাতাস লাগিয়া দোলে নিরবধি কলমিলতা/পাতায় তাহার মাটির মনের গোপন কথা/বিহানের রোদে টলমল করে বিলের পানি/বুকে ভাসে তার রূপে ডগমগ কলমি রানী।’
এই মরমি কবির ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি পাবনা জেলার রাধানগরে জন্মগ্রহণ করেন। বহুমুখী প্রতিভা ছিল তার। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, শিশু সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিত্রকর ছিলেন। তিনি এক নিু-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম মুন্সী উমেদ আলী। তিনি পাবনা জজকোর্টে চাকরি করতেন।
বন্দে আলী মিয়া ১৯২৩ সালে পাবনার মজুমদার একাডেমি থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর কলকাতা আর্ট একাডেমিতে ভর্তি হন এবং প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯২৫ সালে ‘ইসলাম দর্শন’ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। ১৯৩০ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি কলকাতা জীবনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্য লাভ করেন।
বিভিন্ন গ্রামোফোন কোম্পানি তার পালাগান ও নাটিকা রেকর্ড করে বাজারে ছাড়ে। তার প্রায় ২০০ গ্রন্থ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ময়নামতির চর, অনুরাগ, পদ্মানদীর চর, মধুমতির চর, ধরিত্রী, অরণ্য, গোধূলী, ঝড়ের সংকেত। শিশুতোষ গ্রন্থ : চোর জামাই, মেঘকুমারী, মৃগপরী, বোকা জামাই, কামাল আতাতুর্ক, ছোটদের নজরুল।
কবি বন্দে আলী মিয়া শিশু সাহিত্যে উল্লেখযোগ অবদানের জন্য ১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, ১৯৬৭ সালে প্রাইড অফ পারফরম্যান্স পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে রাজশাহীর উত্তরা সাহিত্য মজলিস পদক পান। তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন।
তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। পাবনার রাধানগরে অবস্থিত কবির বাসভবনকে ‘কবি বন্দে আলী মিয়া স্মৃতি জাদুঘর-সংগ্রহশালা’ করার দাবি পাবনাবাসীর। কবির ছেলে জাহিদুল ১৯৮৪ সালে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে ‘কবি বন্দে আলী মিয়া স্মৃতি পাঠাগার’ গড়ে তোলেন। পাঠাগারটি নিবন্ধনভুক্ত। তবে নিয়মিত পর্যাপ্ত অনুদান না পেলে এটি চালানো তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানান জাহিদুল।
কবিপত্নী পরীবানুর বয়স বর্তমানে ৯৩ বছর। কবি বন্দে আলী মিয়ার নামে মাসে তিন হাজার টাকা সাহিত্য ভাতা পাচ্ছেন তিনি। এই বাজারে তিন হাজার টাকায় চলা খুবই কঠিন। তাই সরকারের কাছে ভাতা বৃদ্ধির অনুরোধ জানিয়েছেন কবিপত্নী।
এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া: সভাপতি, বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতি
emdadhb@yahoo.com