Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি: ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ০১:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি: ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ

১ হাজার ৩৭৯ মুক্তিযোদ্ধাকে নতুন করে স্বীকৃতি দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা হলেও এতদিন আবেদন করেননি ও তালিকাভুক্ত হননি।

জানা যায়, ২০১৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে ১ লাখ ২৩ হাজার ১৪৫ এবং সরাসরি ১০ হাজার ৯০০ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির আবেদন করেন। পরে ২০১৭ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দেশজুড়ে ৪৭০টি কমিটি করে দেয়া হয়। এর মধ্যে ৩৭০টি কমিটি যাচাই-বাছাই করে তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। বাকি ৮৫টি কমিটির সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। উপজেলা কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের পর জামুকাও সুপারিশ করায় এখন যে কোনো মুহূর্তে খুলনা ও বরিশাল বাদে বাকি ৬ বিভাগের ১ হাজার ৩৭৯ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির গেজেট প্রকাশ হবে।

জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান এসব মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বিলম্বে হলেও স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাদের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা বলে আমরা মনে করি। তবে তালিকা প্রকাশের আগেই প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে পরে কোনো ধরনের বিতর্ক দেখা দেয়ার সুযোগ তৈরি না হয়। কারণ রাজাকারের তালিকা নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা ভালো নয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান ও তাদের ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়। ফলে তাদের স্বীকৃতি-সম্মান প্রদর্শনে কোনো কমতি করা উচিত হবে না। স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগ বর্তমানে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকারের দায়িত্ব পালন করছে এবং তারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান দেয়ার চেষ্টা করছে। তারপরও এখনও মুক্তিযোদ্ধাদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা যায়নি, যা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। আমরা মনে করি, এখন গেজেটভুক্ত না হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে তালিকাভুক্ত করা দরকার, তেমনি যেসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে তাদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া ও প্রতারণার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই। দুর্ভাগ্যের বিষয়, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরসীমা দুই বছর বাড়ানোর পর কিছু সচিব পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ তৈরি করে সুযোগ নিয়েছে। এ ধরনের অপরাধীদের ভোগ করা সুবিধা ফেরত নেয়ার পাশাপাশি তাদের শাস্তির আওতায় আনা হলে ভবিষ্যতে এমন অপকর্ম কেউ করবে না বলে আশা করা যায়।

সরকার বিভিন্ন সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের সময়সীমা ঘোষণা করেছে; কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আগামী স্বাধীনতা দিবসে তালিকা প্রকাশের একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জামুকার চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। আমাদের প্রস্তাব হল, এগুলো করতে হবে সময় নিয়ে ও সূক্ষ্ম বিচার-বিবেচনার মাধ্যমে। তাছাড়া বর্তমান সরকার মাত্র এক বছর পার করেছে, হাতে এখনও অনেক সময়। জাতির আবেগের জায়গা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর একটি স্থায়ী সমাধান করে যাওয়া হবে সরকারের ভালো একটি কাজ। সে জন্য পুরো দেশের মুক্তিযোদ্ধার তালিকা সম্পূর্ণ করা ও বিদ্যমান তালিকায় কোনো ত্রুটি থাকলে তা দূর করে এগোতে হবে। রাজাকারের তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রেও সবকিছু সঠিক তদন্ত, যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে হতে হবে। সর্বশেষ স্বীকৃতি পেতে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা ও যারা মারা গেছেন তাদের স্বজনরা যাতে সম্মান ও সম্মানী যথাযথভাবে পায় এবং স্বীকৃতি নিয়ে যেন কোনো বিতর্ক তৈরি না হয়, তাই আমাদের কাম্য।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম