বন্ড কাপড়ের চোরাকারবার: জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২০, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফাইল ছবি
একসময় ছিলেন পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক কাপড়ের সামান্য সেলসম্যান; কিন্তু আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মতো হঠাৎ হয়ে পড়েছেন শত কোটি টাকার মালিক। গড়ে তুলেছেন গ্রামে প্রাসাদোপম বাড়িসহ ঢাকায় বহু বাড়ি-ফ্ল্যাট ও পুরান ঢাকায় অনেক দোকান। এটি বন্ডের মাধ্যমে আনা শুল্কমুক্ত কাপড় চোরাচালানে জড়িত আয়নাল হোসেন ওরফে হাতকাটা আইনালের ঘটনা।
কেবল এক আইনাল নয়, বন্ড সুবিধায় আনা কাপড় চোরাচালান করে ও বিদেশে রফতানিজাত পণ্যে ব্যবহার না করে স্থানীয় পোশাকের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে অনেকেই এমন আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন- আজিজুর রহমান ওরফে বোরকা আজিজ, পেট মোটা সোহেল, বিজি কাইয়ুম ওরফে ডেঞ্জারাস কাইয়ুম ও ইয়াসিন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বন্ডের কাপড় চোরাচালানের মাধ্যমে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করলে দেশের দুই ধরনের ক্ষতি। এর মধ্যে একটি হল বন্ড সুবিধায় বিদেশ থেকে আনার কারণে সরকারকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাতে হচ্ছে। অন্যটি হল, এ কারণে স্থানীয় বস্ত্র উৎপাদনকারীদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। বিনা শুল্কে আসা কাপড়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় না পারার ফলে তাদের তৈরি কাপড় অবিক্রীত থেকে যায় এবং ব্যাংক ঋণের সুদ, ইউটিলিটি চার্জ ও বসিয়ে শ্রমিকদের বেতন দেয়ার সামর্থ্য না থাকায় শ্রমিকদের কর্মসংস্থানও হুমকির মুখে পড়ে। এ অবস্থায় বন্ডের কাপড় চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি চোরাচালান বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই।
আশার কথা, বন্ডের কাপড় চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বন্ড কমিশনারেট। এরই মধ্যে শীর্ষস্থানীয় বন্ড চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল, বেশিরভাগ ঢাকা ও চট্টগ্রামে বাস করা বন্ড চোরাকারবারিরা গা ঢাকা দিয়েছে এবং অনেকে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় জামিন নেয়া ও দেশে ফিরে নিরাপদে থাকার তদবির করছেন। অতীতেও দেখা গেছে, বন্ড চোরাকারবারিকে ধরার পর জামিনে বের হয়ে এসে আবারও একই চোরাচালান পেশায় তারা ফিরে গেছেন। যেমন- শীর্ষস্থানীয় বন্ড চোরাকারবারি মতিন কিছুদিন আগে গ্রেফতার হলেও সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। হঠাৎ চোরাচালানের মাধ্যমে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ায় টাকার গরমে এরা ধরাকে সরাজ্ঞান করে নির্লজ্জের মতো কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি কারও কারও পরিবারের সদস্যদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও আছে। অপরাধী-চোরাকারবারিদের এভাবে বেপরোয়া হয়ে পড়া আইনের শাসনের অভাবকেই ইঙ্গিত করে। আমরা মনে করি, চোরাচালানি ও অপরাধী যেই হোক, তাকে বিচারের আওতায় আনার বিকল্প নেই। সরকারের উচিত দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করা ও কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখার বিবেচনায় বন্ডের কাপড়সহ যে কোনো চোরাকারবার, অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
বস্ত্র শিল্প যে কোনো দেশের জন্যই অপরিহার্য একটি শিল্প। অভ্যন্তরীণ চাহিদার পাশাপাশি আমাদের মতো তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের জন্য তো এটি মৌলিক শিল্প। ফলে একে টেকানো ও টেকসই করার জন্য আন্তরিক ও কঠোর ভূমিকা নেয়ার বিকল্প নেই। গার্মেন্ট খাতের লিঙ্কেজ শিল্প ও দেশীয় শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় বস্ত্র ও সুতা খাতে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারসহ যে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে এবং বস্ত্র ও সুতা শিল্পকে কর রেয়াতসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা দিতে হবে।