Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সংকটে বস্ত্র ও সুতাশিল্প

দেশীয় শিল্পের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২০, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সংকটে বস্ত্র ও সুতাশিল্প

দেশীয় শিল্প হিসেবে বস্ত্র ও সুতা খাতে সরকারের সব ধরনের সহায়তা প্রদানের কথা থাকলেও বাস্তবে সেটি হচ্ছে না।

উল্টো এর সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণই করা হচ্ছে। এটি দুঃখজনক। যেখানে গার্মেন্ট শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড শিল্প হিসেবে কাপড় ও সুতাশিল্পে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দেয়া দরকার, সেখানে উল্টো এ খাতের কর অন্য খাত থেকে অনেক বেশি।

জানা যায়, সরকার বর্তমানে গার্মেন্ট শিল্পকে নগদ প্রণোদনা, মাত্র এক শতাংশ শুল্কারোপসহ নানা সুযোগ দিচ্ছে। অথচ ওভেন খাতের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এবং সোয়েটারের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কাঁচামালই আমদানি করতে হয়।

মজার বিষয় হল, রফতানি আয়ের হিসাবের সময় কাঁচামাল আমদানি বাদ দেয়া হয় না। এ কারণে তৈরি পোশাক শিল্পের রফতানি আয়ে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে বলে অভিযোগ বেশ পুরনো। তাই আমরা মনে করি, বস্ত্র ও সুতাশিল্পকেও গার্মেন্টের মতো সুবিধা তো বটেই, বাড়তি সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া দরকার।

বস্তুত বাংলাদেশ ছাড়া চীন, ভারত ও ভিয়েতনামসহ যেসব দেশ তৈরি পোশাক রফতানি করে থাকে, সেসব দেশ নিজেদের বস্ত্র ও সুতা খাতের ওপর অনেক বেশি জোর দিচ্ছে। এতে করে নিজেদের কাঁচামাল ব্যবহারের ফলে তাদের রফতানি আয় যেমন বাড়ছে, তেমনি ক্রেতাদের অর্ডারকৃত পণ্যও সময়মতো পৌঁছানো যাচ্ছে।

এভাবে তারা আমাদের পেছনে ফেলছে গার্মেন্ট পণ্য রফতানিতে। বলার অপেক্ষা রাখে না, গার্মেন্ট খাতে আমাদের অবস্থান ধরে রাখা এবং আরও সুসংহত করার জন্য বস্ত্র, সুতা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল উৎপাদনের ওপর জোর দিতে হবে।

এ জন্য প্রয়োজনে গার্মেন্ট শিল্পের জন্য কতটুকু কাঁচামাল আমদানি করা যাবে এবং কতটুকু দেশের ভেতর থেকে সংগ্রহ করতে হবে- এ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি ও তার বাস্তবায়ন করা দরকার। কারণ, বর্তমান পদ্ধতিতে বেশিরভাগ কাঁচামাল আমদানি করার কারণে তৈরি পোশাকের রফতানি আয়ের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই বিদেশে চলে যাচ্ছে।

বিষয়টি ভেবে দেখার সময় হয়েছে এবং দেশীয় শিল্প রক্ষায় এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশীয় শিল্পে, বিশেষত সব ধরনের রফতানি পণ্যের কাঁচামাল তৈরির যেসব কারখানা দেশে গড়ে উঠেছে, সেগুলোকে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা ও প্রণোদনা দেয়া না হলে রফতানি পণ্যের বাজার ধরে রাখা যাবে না।

উল্লেখ্য, চীন ও ভারত তাদের নিজেদের শিল্প ও বিভিন্ন লিংকেজ শিল্পে বিলিয়ন ডলার প্রণোদনা দিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে এসব হালকা প্রকৌশল খাতকে অবজ্ঞা করা হয়, এমনকি কাঁচামাল আমদানিকে উৎসাহিত করা হয়।

ফলে হাজারও কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পরও সুতা ও বস্ত্রশিল্পের অবিক্রীত সুতা গোডাউনে পড়ে থাকে বছরের পর বছর। এটি কোনোভাবেই শিল্পবান্ধব নীতি হতে পারে না এবং এতে করে সাময়িক ও হাতেগোনা কিছু মানুষের লাভ হলেও দীর্ঘমেয়াদে দেশের স্বার্থ রক্ষা হবে না।

আমরা আশা করব, নীতি প্রণয়নের সময় নিজস্ব শিল্পের দিকে সরকার দৃষ্টি দেবে এবং দেশীয় শিল্প রক্ষার উদ্যোগ নেবে। এ ক্ষেত্রে রফতানিতে নগদ প্রণোদনা, বস্ত্র ও সুতাসহ সব ধরনের দেশীয় লিংকেজ শিল্পে কর রেয়াত, স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান এবং অন্যান্য সুবিধার বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম