স্বাগত ২০২০: নতুন বছর শান্তি ও সমৃদ্ধিময় হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২০, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আজ ২০২০ সালের প্রথম দিন। অসীমের পানে মহাকালের যে যাত্রা, সেখানে সূচিত হল আরেকটি মাইলফলক। এই যে মহাকালের যাত্রা, সেখানে একেকটি বছর আসে নতুন উদ্দীপনা ও প্রেরণা নিয়ে।
আমরা মুছে ফেলি গত হয়ে যাওয়া বছরের গ্লানি, উৎসাহ খুঁজে পাই সুখকর ঘটনাগুলো থেকে, তারপর এগিয়ে যাই অগ্রগতির দিকে।
কেমন কেটেছে আমাদের বিদায়ী বছরটি? প্রতি বছরের মতো গত বছরেও আশা-নিরাশার দোলায় দুলেছি আমরা। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের কিছু সাফল্য এসেছে। এর মধ্যে অন্যতম হল প্রবৃদ্ধির হার বাড়া এবং তা ধরে রাখতে পারা। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
তবে ব্যাংকিং, শেয়ারবাজার, বিদেশে কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইতিবাচক তেমন কিছু ঘটেনি। বস্তুত ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অনিয়ম ও ঋণখেলাপির বিষয়টি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
ক্রীড়াক্ষেত্রে দক্ষিণ এশীয় গেমসে কিছু সাফল্য এসেছে। তবে হতাশাজনক খবরের জন্ম দিয়েছে ক্রিকেট। গত বছর অনাকাক্সিক্ষত বহু ঘটনায় হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়েছে দেশবাসীর।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল ডেঙ্গুজ্বরের প্রাদুর্ভাব। প্রায় মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল মশাবাহিত এ রোগ। ডেঙ্গুতে সরকারি হিসাবেই প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা ও বনানীতে দুটি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডসহ বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ।
এছাড়া সড়ক ও ট্রেন দুর্ঘটনাও কেড়ে নিয়েছে বহু লোকের প্রাণ। মাদ্রাসাছাত্রী রাফি, বুয়েটছাত্র আবরার এবং বরগুনার রিফাত হত্যাকাণ্ড বছরজুড়ে আলোচিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গত বছরও বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলা বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল শান্তির দেশ বলে পরিচিত নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ হামলা। সেখানে জুমার নামাজের সময় দুটি মসজিদে এক সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হন অর্ধশতাধিক মানুষ।
নিহতদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিকও ছিলেন। এছাড়া খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় উৎসব ইস্টার সানডের দিন শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বো ও এর আশপাশের তিনটি গির্জা এবং বড় তিনটি হোটেলে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ। অন্যদিকে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থীদের আন্দোলন।
ভারতে কাশ্মীর ইস্যু এবং বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ আন্তর্জাতিক অঙ্গনের আরেকটি বড় ঘটনা সন্দেহ নেই। রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলা এবং তার শুনানিও গত বছরের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
বিদায়ী বছর অনেক বিশিষ্টজনকে হারিয়েছি আমরা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- রাজনীতিবিদ সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, মোজাফফর আহমদ, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সাদেক হোসেন খোকা, কূটনীতিবিদ সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, সমাজকর্মী ও ব্র্যাক প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ, কবি আল মাহমুদ, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক মমতাজউদ্দীন আহমদ, স্থপতি রবিউল হুসাইন, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, শাহ আলমগীর, সঙ্গীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ, সুবীর নন্দী, সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল প্রমুখ। তাদের সবার পরিবারের প্রতি রইল আমাদের সমবেদনা। আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে হারিয়েছি- জিম্বাবুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে, মার্কিন লেখিকা টনি মরিসন, ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক, সাবেক চীনা প্রেসিডেন্ট লি পেং, সাবেক মিসরীয় প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি প্রমুখকে।
এ বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ পালিত হবে। তাই ২০২০ সাল ঘোষিত হয়েছে মুজিববর্ষ হিসেবে। আমরা আশা করব, সরকার, রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নতুন বছরটিকে শান্তি-সমৃদ্ধিময় ও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলবেন। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।