জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন: বিশ্ব সম্প্রদায়কে দায়িত্বশীল হতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রতিটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হলেও পরে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি লক্ষ করা যায় না। এ ধারার পরিবর্তন দরকার।
শিল্প বিপ্লবের পর থেকে শিল্পসমৃদ্ধ দেশগুলোর কলকারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ দূষিত গ্যাস নির্গত হয়ে বিশ্বের পরিস্থিতি কী ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তা প্রতিনিয়ত আলোচিত হচ্ছে। এখন দরকার বিভিন্ন পর্যায়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।
স্পেনের মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত কপ-২৫ সম্মেলনে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলো আন্তরিকতার পরিচয় দেবে, এটাই বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা।
মাদ্রিদে কপ-২৫ সম্মেলনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এখন থেকেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমানে প্রতিটি দেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো জলবায়ুজনিত অরক্ষিত দেশগুলোর জন্য অস্তিত্বের হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, আমরা সম্ভবত আমাদের সময়ের সবচেয়ে কঠিন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁক অতিক্রম করছি। বস্তুত, সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছে।
আমরা ক্ষয়ক্ষতির ধকল বয়ে বেড়াচ্ছি, অথচ এক্ষেত্রে আমাদের কোনো দায় নেই। এটি যে একটি মারাত্মক অবিচার, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার
বক্তৃতায় এ বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি ও ক্ষতি মোকাবেলা করা বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পক্ষে সম্ভব নয়। যেহেতু শিল্পোন্নত দেশগুলোর কারণেই এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তাই দায় স্বীকারের পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবেলা ও ক্ষতিপূরণ প্রদানে তাদের কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
তবে ক্ষতিপূরণ প্রদান নিয়ে নানারকম জটিলতা সৃষ্টির বিষয়টি দুঃখজনক। একেকটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়। এসব আলোচনা আবার দ্রুত থেমে যায়। বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার জন্য আরেকটি বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের অপেক্ষায় থাকতে হয় কেন?
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। তাদের জীবনমানের পরিবর্তনে বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই জনগোষ্ঠীর বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে, তাই তাদের জীবনমানের পরিবর্তনে শিল্পোন্নত দেশগুলোকে নিতে হবে বিশেষ উদ্যোগ।
পরিবেশের আরও অবনতি রোধে বিশ্ববাসীকে প্যারিস চুক্তির সব ধারাসহ প্রাসঙ্গিক সব বৈশ্বিক চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিস্থিতির মারাত্মক রূপ নেয়া ঠেকাতে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি আলোচনা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকা ও ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়।
দুঃখজনক হল, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওপরও দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। এর ফলে এসব দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হলে তাদের অস্তিত্ব রক্ষাই কঠিন হয় পড়বে। এ ব্যাপারে শিল্পোন্নত দেশগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে না এলে বর্তমান জটিল পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।