ন্যাম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্বসম্প্রদায়কে গুরুত্ব দিতে হবে
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০১৯, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শুক্রবার সকালে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে শুরু হয়েছে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) দু’দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলন। এতে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোহিঙ্গা সংকট কেবল বাংলাদেশে নয়, এর বাইরেও অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মিয়ানমারের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়াই এ সংকটের একমাত্র সমাধান। এছাড়া সমকালীন বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বান্দুং সম্মেলনে গৃহীত নীতিমালার আলোকে সম্মিলিত ও যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। আমরা মনে করি, মানবতার স্বার্থে এবং মানুষের মর্যাদার সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকারগুলো দ্রুত ফিরিয়ে দেয়ার বিকল্প নেই।
আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে আমাদের অনেক সাফল্য থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা এবং রোহিঙ্গা সংকটে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অথচ এ দুটি সংকটের কোনো একটি তৈরির পেছনেও আমাদের হাত নেই। উন্নত দেশগুলো কর্তৃক ফসিল ফুয়েল ও সিএফসিসহ বিভিন্ন ধরনের গ্যাস ব্যবহারের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা সংকটের শেকড় রয়েছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এ দুটি সংকটের বড় ধরনের খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের দেশ হয়েও। এসব বিষয় তুলে ধরে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা প্রত্যাশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এ সংকট দ্রুত সমাধানের ওপর জোর দেয়া।
ন্যাম সম্মেলনে আরও অনেক কিছু তুলে ধরার পাশাপাশি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের ১ কোটির বেশি শরণার্থীকে ভারতের আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। নিজেদের ভোগান্তির অতীত স্মরণ করেও মানবতার স্বার্থে সাময়িকভাবে আমরা মিয়ানমারের ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু নিজেদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে বছরের পর বছর তাদের ধরে রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ অবস্থায় বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো রোহিঙ্গা ইস্যুতে চুপ করে বসে থাকতে পারে না। বিষয়টি বিশ্বসম্প্রদায়কে অনুধাবন করতে হবে। এ সংকট সমাধানে তৎপর হতে হবে।
আশার কথা, ন্যাম সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং হত্যাযজ্ঞের বিচার দাবি করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহাম্মদ। আসিয়ানকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে সব সময় এ বিষয়ে কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। এছাড়া ইরানের পক্ষ থেকেও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। সবার সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তাসহ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পথ তৈরি হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।