মেশিন ক্রয়ে লুটপাটের আয়োজন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০১৯, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন প্রকল্পের ক্রয়ে দুর্নীতি এতটাই সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে যে, এটি প্রায়ই গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য দুর্নীতির খবরও পাওয়া যায়। মঙ্গলবার যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় খাতে ১১৮ কোটি টাকারও বেশি লুটপাটের আয়োজন করেছে একটি অসাধু চক্র। বিষয়টি উদ্বেগজনক।
উল্লেখ্য, চলতি বছর থেকে সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ের নির্দেশনা দেয় সরকার।
এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ‘স্পেসিফিকেশন’ নির্ধারণ করে এ মেশিন কিনতে স্কুল কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ের উদ্যোগ নিতে শুরু করে।
একপর্যায়ে বাজারদর অনুযায়ী স্পেসিফিকেশন অনুসরণ করে কেনার নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের একটি অসাধু চক্র অতিরিক্ত দামে ওই মেশিন ক্রয়ের বিষয়ে তৎপরতা শুরু করে। জানা গেছে, ওই চক্রের সদস্যরা নানা কৌশলে প্রতিটি মেশিন ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি দামে কিনতে ‘বাধ্য’ করছে সংশ্লিষ্টদের।
এমনকি ওই চক্রের সদস্যরা প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত রাখে। ইতিমধ্যে ওই চক্রের পরামর্শ অনুযায়ী বেশক’টি স্কুলে এ মেশিন কেনাও হয়েছে। প্রতিটি মেশিনে কমবেশি ১৮ হাজার টাকার ‘বাণিজ্য’ হলে সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ওই চক্রটি ১১৮ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিতে সক্ষম হবে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের অনেকে অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সচিব সম্প্রতি নিজ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ঘোষণা দেন, ‘বায়োমেট্রিক’ হাজিরা মেশিন কেনার জন্য কোনো বিশেষ কোম্পানিকে নির্বাচন করা হয়নি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শুধু স্পেসিফিকেশন অনুমোদন করেছে। এ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী স্কুল কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে যাচাই করে সর্বোত্তম দামে নিজেদের পছন্দমতো বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কিনে স্কুলে স্থাপন করতে পারে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনও সম্প্রতি স্পষ্ট করে বলেছেন, বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার জন্য কোনো কোম্পানিকে নির্বাচন করা হয়নি।
কেউ তার নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করার চেষ্টা করছে কিনা তিনি তা খতিয়ে দেখবেন। আমরা আশা করব, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ও বিভিন্ন প্রকল্পের ক্রয়ে যাতে কোনো রকম দুর্নীতি না হয়, কর্তৃপক্ষ তা নিশ্চিত করবে।