Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

রেলের মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন

অবিলম্বে সমস্যাটির সমাধান করতে হবে

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০১৯, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রেলের মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন

সুলভ ও আরামদায়ক ভ্রমণ হিসেবে রেলের বিকল্প নেই বললেই চলে; কিন্তু সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী সরকারি সংস্থা হওয়ার পরও আমাদের রেলওয়ে সত্যিকারার্থে যাত্রীবান্ধব ও আরামদায়ক গণপরিবহন হয়ে উঠতে পারেনি। বর্তমানে তো ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ ও জরাজীর্ণ ইঞ্জিন সমস্যা। রেলে লোকোমোটিভ হিসেবে পরিচিত ইঞ্জিনের ২৬২টির মধ্যে ২০৬টি বা ৭৭ শতাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। অথচ এগুলো জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে রেলের কার্যক্রম। এ কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।

সর্বশেষ ৩ অক্টোবর রংপুরের কাউনিয়ায় মেইল ট্রেন ‘সেভেন আপ’ দুর্ঘটনায় একজন প্রাণ হারান, আহত হন ৩০ জন। এ দুর্ঘটনার পেছনে ইঞ্জিনের ব্রেকফেল হওয়া মূল কারণ বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী। এর আগে চলতি বছরের জুন মাসে ঢাকা-সিলেট পথে কুলাউড়ায় উপবন এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত হন। আহত হন অর্ধশতাধিক যাত্রী। ওই দুর্ঘটনার পেছনেও ইঞ্জিন সমস্যা দায়ী ছিল। তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, ওই ট্রেনটির ইঞ্জিন ও বগির আয়ুষ্কাল শেষ হয়েছিল ৪০ বছর আগে। এভাবে রেলের বেশিরভাগ দুর্ঘটনার পেছনেই ইঞ্জিন সমস্যা চিহ্নিত হচ্ছে। এছাড়া ইঞ্জিন সমস্যার কারণে সিডিউল বিপর্যয়, হঠাৎ যাত্রাপথে চলন্ত ট্রেনের বিকল হয়ে পড়াসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অথচ রেলের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।

জানা যায়, রেলের উন্নয়নে গত ৫ বছরেই কেবল ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। গত ১০ বছরে এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। এমনকি রেলের উন্নয়ন ও রেলে আমূল পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে ৩০ বছরমেয়াদি (২০১৬-৪৫) মহাপরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। ৬ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪৫ সালের মধ্যে রেলওয়েতে আরও ৬০০ ইঞ্জিন, ৬ হাজার যাত্রীবাহী কোচ এবং ৭ হাজার মালবাহী ওয়াগন যুক্ত করা হবে। এছাড়া দেশের সবক’টি জেলাকে রেল নেটওয়ার্কে নিয়ে আসাসহ দূরত্ব অনুযায়ী ইলেক্ট্রনিক ও বুলেট ট্রেন ও অত্যাধুনিক দ্রুতগতির ট্রেন চালু করা হবে। বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু এখনও কেন ইঞ্জিনের মতো মূল সমস্যাটির সমাধান করা হচ্ছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

রেলের উন্নয়ন চলমান হলেও এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংস্থাটির লোকসান। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেলের যাত্রী পরিবহন প্রায় সোয়া এক কোটির বেশি হয়েছিল। উদ্বেগের বিষয়, সারা পৃথিবীতে চলাচলের জন্য রেল সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলেও স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশতাব্দীতে এসেও আমাদের রেলওয়ে পশ্চাৎপদ রয়ে গেছে। পৃথক রেলপথ মন্ত্রণালয় হওয়ার পরও দৃশ্যমান উন্নতি নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় ইঞ্জিন সমস্যার সমাধানে জোর দেয়াসহ সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে রেলসেবার মান বাড়াতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম