প্রধানমন্ত্রীর কড়া অবস্থান, কথার সঙ্গে কাজের মিল দেখতে চাই
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ক্যাসিনোতে র্যাবের অভিযান। ছবি: সংগৃহীত
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে দেশের প্রথম কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১-এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক সম্প্রচার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেছেন, দুর্নীতিবাজ ‘উইপোকারা’ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকালে অর্থ লুটে নিচ্ছে, দেশের উন্নয়নের জন্য জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের প্রতিটি পয়সার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ওইসব উইপোকা আটক করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন- জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে দল ও পরিবার নির্বিশেষে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান অভিযান অব্যাহত রাখার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তিনি যথার্থই বলেছেন, একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ দেশের অর্থ লুটে নিচ্ছে। বর্তমানে দেশে উন্নয়নের যে মহাযজ্ঞ চলছে, প্রধানমন্ত্রী কথিত উইপোকারা না থাকলে দেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যেত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। দুর্নীতি এখন মহামারীর আকার ধারণ করেছে, দুর্নীতিলব্ধ টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে।
চলমান অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের কাছে যে বিপুল পরিমাণ টাকা ও ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে, তাতেই প্রমাণ হয় সারা দেশের বাস্তব চিত্রটি কী। আমরা মনে করি, ক্যাসিনোসংক্রান্ত যে দুর্নীতির চিত্র আমরা দেখতে পেয়েছি, সারা দেশের দুর্নীতি তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি।
বস্তুত, দুর্নীতিবাজরা অবৈধ উপায়ে টাকা বানানোর স্বর্গভূমি বানিয়ে ফেলেছে দেশটাকে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতেই হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য এটা খুবই জরুরি। আমাদের কথা, দেরিতে হলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান যেমনটা অব্যাহত রয়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানও তেমন অব্যাহত থাকবে, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
প্রধানমন্ত্রী দল ও পরিবার নির্বিশেষে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে যে হুশিয়ারি দিয়েছেন, সেটাও আশাব্যঞ্জক। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, সরকারি দল ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। সরকারি ছত্রছায়ায় থেকে তারা দুর্নীতি করে আসছিল। সরকারি দলের নেতাকর্মী হওয়ায় তারা এক ধরনের দায়মুক্ত থেকেই দুর্নীতি করেছে। প্রধানমন্ত্রী এই সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছেন, সেজন্য তাকে ধন্যবাদ।
এখন দেখার বিষয়, দলীয় ও পরিবারভুক্ত কারও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী দলীয় ও পরিবারভুক্ত দুর্নীতিবাজরা যদি ছাড় না পায়, তাহলে সরকার ও সরকারি দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। ইতিমধ্যে বিশেষত দুর্নীতির কারণে সরকারের ভাবমূর্তি অনেক ক্ষুণ্ণ হয়েছে। হৃত ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে হলে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই। আমরা সরকারের পরবর্তী কার্যক্রমের দিকে আগ্রহভরে তাকিয়ে থাকলাম।