চীনকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত হোক
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইড লাইনে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রকৃত পরিস্থিতি মূল্যায়নে ত্রিপক্ষীয় যৌথ কার্যনির্বাহী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে তিন দেশ।
এতে করে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে বলে আশা করা যায়। কারণ কিছুটা আপত্তি সত্ত্বেও মিয়ানমার যেহেতু ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাজি হয়েছে এবং দেশটির ঘনিষ্ঠ সহযোগী রাষ্ট্র চীনও তাতে রয়েছে, সেহেতু ভালো একটি পরিবর্তন আসতে পারে।
বস্তুত, চীন ও ভারত আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে এবং মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত হতে পারে, এমন একটি ধারণা সবার মধ্যে রয়েছে। এবার এর বাস্তব প্রতিফলন দেখার পালা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে গণহত্যার শিকার হতভাগ্য রোহিঙ্গাদের জন্যই কেবল নয়, মানবতার কল্যাণে বিশ্ববাসীর ইতিবাচক আগ্রহ প্রমাণের জন্যও রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
জানা যায়, এ সংক্রান্ত যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম বৈঠক হবে অক্টোবরে। এর আগে বিভিন্ন টালবাহানা করলেও প্রথমবারের মতো মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিষয়টি আশাব্যঞ্জক, তবে সত্যিকারার্থে প্রত্যাবাসন শুরু হওয়া এবং বেশিরভাগ রোহিঙ্গার স্বদেশে ফিরে যাওয়ার আগে খুব বেশি খুশি হওয়ার কারণ নেই। কারণ এর আগেও এ ধরনের সম্ভাবনা দেখা দিলেও পরে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি, এমনকি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও রোহিঙ্গাদের ওপর দোষ চাপিয়েও পার পাওয়ার চেষ্টা করেছে মিয়ানমার।
বলার অপেক্ষা রাখে না, রাখাইন তথা মিয়ানমারে পরিবেশ তৈরি না করে এবং নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বসহ সব ধরনের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে রাজি করানো কঠিন। গণহত্যা থেকে বেঁচে পালানো মানুষ কীভাবে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া ফিরে যেতে পারে!
আশার কথা, এক সময় ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে রোহিঙ্গা সংকট এড়িয়ে যাওয়া চীন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাজি হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত বলেছেন, দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে রাজি বেইজিং। এ ছাড়া ভারতও রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখার ঘোষণা দিয়েছে। সামনের মাসে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় রোহিঙ্গা ইস্যু আলোচনায় থাকবে।
ফলে রোহিঙ্গাদের নিজভূমে নিরাপত্তাসহ দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে, এটাই কাম্য। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ-চীন-মিয়ানমার ত্রিপক্ষীয় কমিটির পাশাপাশি ভারত ও অন্যান্য প্রভাবশালী পক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা গেলে দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা যাবে।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগে থেকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সোচ্চার। এখন চীন ও ভারতের পাশাপাশি রাশিয়াকেও সম্পৃক্ত করে কৌশলে এগোতে হবে। বর্তমান সময়ে একটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে নির্যাতন, নিপীড়ন, এমনকি নিশ্চিহ্ন করে ফেলার মতো বর্বর আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
মিয়ানমারকে এমন গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকতে এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে বাধ্য করতে হবে। বাংলাদেশ সীমিত সামর্থ্য সত্ত্বেও বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে; কিন্তু সীমিত সম্পদ ও ক্ষুদ্র ভূখণ্ড নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে কাজটি চালিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য অসম্ভব। ত্রিপক্ষীয় কমিটি রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।