Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

বিদ্যালয়ের উন্নয়নে অংশীজনের ভূমিকা

Icon

মুহাম্মদ মুহীউদ্দীন

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০১৯, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিদ্যালয়ের উন্নয়নে অংশীজনের ভূমিকা

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৯৯। এসব বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে প্রায় ২ কোটি ১৯ লাখ শিশু।

দেশের আনাচে-কানাচে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে আছে এই বিদ্যালয়গুলো। মানুষের দান করা ভূমিতেই গড়ে উঠেছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান।

মানুষ তাদের সন্তানদের কথা চিন্তা করে, দেশের উন্নয়ন, শিক্ষা খাতের অগ্রগতির কথা ভেবেই এই জমিগুলো সরকারকে দিয়েছেন। স্বাধীনতার আগে এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তাদের এই মূল্যবান সম্পত্তি দান না করলে হয়তো এতগুলো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠত না।

প্রতিটি বিদ্যালয়েরই একটি নির্দিষ্ট ক্যাচমেন্ট এরিয়া রয়েছে। শিশু জরিপের মাধ্যমে ৪+ কিংবা ৫+ থেকে ১০+ শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা হয়।

ক্যাচমেন্ট এরিয়ার কোনো শিশু যেন ভর্তির আওতার বাইরে না থাকে, কেউ যেন ঝরে না পড়ে বছরের শুরুতেই, সেজন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ জরিপ চালানো হয়। ফলে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়মুখী হচ্ছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি শিশু ভর্তি হওয়ার পর তার পড়াশোনার সব দায়িত্ব সরকারের। বছরের শুরুতেই বিনামূল্যে বই দেয়া থেকে শুরু করে শতভাগ উপবৃত্তি প্রদান- সবকিছুই সরকার করছে।

তাহলে সরকারকে সহযোগিতা করতে তথা বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার যারা বসবাস করছেন তাদের দায়িত্ব কী? আমরা মনে করি, তাদের অনেক বেশি দায়িত্ব রয়েছে। প্রতি বছর বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের বরাদ্দ দিয়ে থাকে।

তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য SLIP (বিদ্যালয়ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা), রুটিন মেইন্টেন্যান্স, প্রাক প্রাথমিক ইত্যাদি। প্রতিটি বিদ্যালয়েই ব্যবস্থাপনা কমিটি রয়েছে।

সাধারণত শিক্ষকরা এ কমিটির সহযোগিতায় সব বরাদ্দের অর্থ খরচ করে থাকেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিখন-শেখানো কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করার কথা বলা আছে।

মা সমাবেশ, গরিব শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, বিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রাধিকারের ভিত্তিতে স্লিপের অর্থ খরচ করা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা-ই হয়। এসব কাজে সহযোগিতার জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামর্থ্যবানরা ইচ্ছা করলেই এগিয়ে আসতে পারেন।

বিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে এবং সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় জনসমাজের সম্পৃক্ততা অতি জরুরি। সরকার প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন করে দফতরি কাম প্রহরী দিচ্ছে। তাহলে কি আমাদের দায়িত্ব শেষ?

আমরা মনে করি, দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়নি। শিক্ষকদের উচিত স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করা। তাদেরকে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে সম্পৃক্ত করা।

মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ, উঠান বৈঠক, স্লিপ স্টেকহোল্ডার মিটিং, সুধী সমাবেশ, বৃক্ষরোপণ, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাসহ যাবতীয় অনুষ্ঠানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি থেকে শুরু করে সর্বসাধারণকে আমন্ত্রণ জানানো।

এতে করে বিদ্যালয়ের ব্যাপারে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে এবং অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠাতে উৎসাহী হবেন।

অংশীজনের সহায়তায় ঝরে পড়া রোধ, শতভাগ মিড ডে মিল বাস্তবায়ন, বাল্যবিবাহ বন্ধ, শিশুশ্রম রোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বিদ্যালয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা, গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থাসহ যাবতীয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে ‘আমাদের বিদ্যালয় আমরাই গড়ব’- এ স্লোগান বাস্তবায়ন সম্ভব।

মুহাম্মদ মুহীউদ্দীন : সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার

naforhad.du@gmail.com

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম