মাতৃত্বকালীন ভাতা
পরিমাণ ও মেয়াদকাল বাড়াতে হবে
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০১৯, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শুক্রবার যুগান্তর কার্যালয়ে পত্রিকাটির ‘সুরঞ্জনা’ বিভাগের আয়োজনে ‘বাজেটে মাতৃত্বকালীন ভাতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকির উপস্থিতিতে বক্তারা মাতৃত্বকালীন বর্তমান ভাতার পরিমাণ ৮০০ টাকা থেকে আট হাজার টাকা এবং ভাতার মেয়াদ তিন বছর থেকে পাঁচ বছরে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছেন।
প্রস্তাবটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক এবং এটা বাস্তবায়িত হলে বিশেষত গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের জীবনমানের প্রভূত উন্নতি হবে। বস্তুত, একটি শক্তিশালী জাতি গড়তে হলে সবার আগে প্রয়োজন সবল মা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায, এ দেশে নারী সমাজ অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
আর্থিক অসঙ্গতির কারণে তারা সবল মা হতে পারছেন না। স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও সচ্ছন্দ সন্তান প্রসবের প্রয়োজনে তাদের দরকার আর্থিক সহযোগিতা, যা থেকে গ্রামীণ সন্তানসম্ভবারা বঞ্চিত। এটা ঠিক, মাতৃত্বকালীন ভাতার উদ্যোগটি সরকার গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে ভাতার পরিমাণ ও ভাতা গ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু আলোচনায় উঠে এসেছে এবং আমরাও বিশ্বাস করি, মাতৃত্বকালীন ভাতা হিসেবে ৮০০ টাকা যথেষ্ট নয়। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে ভাতার মেয়াদ তিন বছর করা হয়েছে- এ স্বল্প সময়ও যথার্থ নয়। মাতৃত্বকালীন ভাতার পরিমাণ যেমন বাড়ানো দরকার, তেমনি প্রয়োজন এর মেয়াদ তিন বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছরে উন্নীত করা।
শিশুর স্কুলে যাওয়ার বয়স পর্যন্ত ভাতা চালিয়ে যাওয়া হলে শিশুর মা ও তার পরিবার স্বস্তি পেতে পারে। আলোচনা অনুষ্ঠানে আরও উঠে এসেছে, এখন থেকে মাতৃত্বকালীন ভাতা হিসেবে যে ৮০০ টাকা দেয়া হবে, তা যাতে প্রকৃত অর্থেই সন্তানসম্ভবা নারীদের হাতে যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। দেখা যায়, দেয় ভাতার টাকা পরিবারের পুরুষ সদস্যের হাতে পৌঁছলে সেই টাকা মাতৃত্বকালীন সমস্যাগুলোর পরিবর্তে সংসারের অন্য প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।
অনুষ্ঠানে যুগান্তরের পক্ষ থেকে দুটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। প্রথমটি হল, দরিদ্র মায়েদের প্রসবকালীন সিজারিয়ান ভাতা প্রদান এবং দ্বিতীয়টি হল, অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তান প্রসব বন্ধ। এ দুটি প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত এই কমিটির সভাপতি।
গত দুই দশকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ন অনেক বেড়েছে। মায়েদের প্রতি যত্নবান হলে এই প্রক্রিয়া আরও বেগবান হবে। আমরা যুগান্তর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় উচ্চারিত সুপারিশগুলোর প্রতি সরকারের আশু দৃষ্টি কামনা করছি।