Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

জীবদ্দশাতেই যেন স্বীকৃতি মেলে

Icon

বোরহান বিশ্বাস

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০১:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জীবদ্দশাতেই যেন স্বীকৃতি মেলে

জীবদ্দশাতেই যেন স্বীকৃতি মেলে। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে পদকের বিবেচনায় স্বাধীনতা ও একুশে পদক সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ। স্বাধীনতা পুরস্কার সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের স্মরণে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এই পদক প্রদান করা হচ্ছে।

একুশে পদক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ১৯৭৬ সালে এই পদকের প্রচলন করা হয় (তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া)।

পদক প্রদানের শুরু থেকেই বিভিন্ন সময় জীবিত ব্যক্তিদের পাশাপাশি যারা প্রয়াত হয়েছেন তাদেরও (মরণোত্তর) পদক দেয়া হচ্ছে। কখনও কখনও জীবিতদের ছাড়িয়ে গেছে মরণোত্তের সংখ্যা। কয়েক বছরের চিত্র দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ২০০২ সালে ১৪ জন ব্যক্তিকে জাতীয় জীবনে অবদানের জন্য একুশে পদক দেয়া হয়; যাদের ৭ জনকে দেয়া হয় মরণোত্তর পদক। ২০০৩ সালে ১২ জন একুশে পদকপ্রাপ্তের মধ্যে ৫ জন ছিলেন প্রয়াত।

২০১৪ সালে ৯ জন ব্যক্তি এবং একটি প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় জীবনে অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়; যাদের মধ্যে ৭ জনকে প্রদান করা হয় মরণোত্তর সম্মাননা। ২০১৬ সালে ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি সংস্থাকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়, যাদের মধ্যে ৭ জনকে দেয়া হয় মরণোত্তর সম্মাননা। ২০১৮ সালে ১৮ জন ব্যক্তিকে জাতীয় জীবনে অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়; যাদের মধ্যে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয় ১০ জনকে (তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া)।

এ কথা অনস্বীকার্য, স্বাধীনতা অথবা একুশে পদকপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি। তবে ষাটের কোঠায় এসেও এমন অনেক সম্মানিত ব্যক্তি প্রয়াত হয়েছেন, যারা একুশে অথবা স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার দাবিদার ছিলেন। পরবর্তী সময় কেউ কেউ মরণোত্তর পদক পেয়েছেন বটে, তবে তা তাদের পরিবারের পক্ষে গ্রহণ করা অনেক বেদনার ছিল।

প্রয়াত জনপ্রিয় লেখক, নাট্যকার ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ তার ৬৩তম জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশিত গ্রন্থ ‘রঙপেন্সিলে’ অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির একুশে পদক না পাওয়া নিয়ে আক্ষেপ করে লিখেছিলেন- ‘আচ্ছা, এই মানুষটি কি অভিনয়কলায় একটি একুশে পদক পেতে পারেন না? এই সম্মান কি তাঁর প্রাপ্য নয়?’ মৃত্যুর ৬ বছর পর হুমায়ুন ফরীদি মরণোত্তর একুশে পদক পেয়েছেন।

বাংলা নাটকে আধুনিক নাট্যধারার প্রবর্তক সাঈদ আহমদ ২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি প্রয়াত হন। এক মাস পরই তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, লেখক ও গীতিকার তারেক মাসুদ ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পরের বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। প্রথাবিরোধী ও বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ ২০০৪ সালে মারা যান। তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয় ২০১২ সালে।

জীবদ্দশায় পদক পেয়েছেন এমন অনেকে আছেন, যাদের ক্ষেত্রে ওই পদক বিবেচনার জন্য অনেক বছর সময় লেগে গেছে। পদকপ্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রতার তালিকায় পড়ে আমাদের অনেক গুণী মানুষই হারিয়ে গেছেন। পরবর্তী সময় তাদের অনেকের পরিবারকে মরণোত্তর পদক গ্রহণ করতে হয়েছে। বর্তমান দৃঢ়চিত্তের সরকার এ বিষয়ে যদি আরও তৎপর হয় তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, মরণোত্তর সংখ্যা কমে এসে জীবদ্দশাতেই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক পাবেন গুণীজনরা।

বোরহান বিশ্বাস : প্রাবন্ধিক, খিলগাঁও, ঢাকা

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম