
প্রিন্ট: ০১ মে ২০২৫, ০২:৫৬ এএম
অর্থনীতিতে ইলিশের অবদান বাড়ছে

আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম ব্যুরো ও মির্জা জাকির, চাঁদপুর
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০১৯, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
দেশের অর্থনীতিতে ইলিশের অবদান বাড়ছে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি, মাছের দাম বাড়া ও ইলিশের সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততার কারণে অর্থনীতিতে এ মাছ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। মাঝে মাঝে রফতানিও হচ্ছে। যদিও বিশ্ববাজারে চাহিদা থাকার পরও রফতানির অনুমতি মিলছে না সবসময়। এ কারণে রফতানিও হচ্ছে না বেশি।
বর্তমানে দেশে বছরে ৪৫ লাখ টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ১২ শতাংশ ইলিশ। অর্থাৎ ৫ লাখ টনের বেশি ইলিশ।
আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে আহরিত ইলিশের মধ্যে ৭৫ শতাংশ হয় বাংলাদেশে। বাকি ২৫ শতাংশের মধ্যে ১৫ শতাংশ মিয়ানমারে, ৫ শতাংশ ভারতে এবং বাকি ৫ শতাংশ অন্যান্য দেশে। স্বাদ ও গন্ধে বাংলাদেশের ইলিশ অতুলনীয়। এ কারণে বাংলাদেশের ইলিশের চাহিদা বেশি। কিন্তু দেশের বাজারের চাহিদার কথা বিবেচনা করে বিদেশে রফতানি হতে দেয়া হচ্ছে না।
দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান প্রায় ১ শতাংশ। অর্থাৎ ২৫ হাজার কোটি টাকা। আগে এর পরিমাণ আরও কম ছিল। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি করে জিডিপিতে এর অবদান আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রায় ২৫ লাখ লোক ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও খুচরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে উপকূলীয় দ্বীপ ও চরাঞ্চলে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যবিমোচনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে ইলিশ।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে ৪ লাখ ৯৭ হাজার টনে দাঁড়ায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ১৮ হাজার টনে। ওই সময়ে উৎপাদন বেড়েছে ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। অথচ ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের মোট উৎপাদন ছিল মাত্র ৩ লাখ টন।
৩০০ কোটি টাকার বেশি ইলিশ আহরণ : চট্টগ্রামের পাঁচটি উপজেলায় এবং মহানগরীর একাধিক ঘাট এখন ইলিশে সরগরম। ঘাটগুলো হচ্ছে রাসমনি, আনন্দবাজার, উত্তর কাট্টলি, দক্ষিণ কাট্টলি, আকমল আলী ঘাটসহ আরও কয়েকটি ঘাট। এসব ঘাটে ইলিশ বিক্রির ধুম পড়েছে। এ ছাড়াও জেলার বাঁশখালী, মিরসরাই, আনোয়ারা, সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ডের উপকূল এলাকায় প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে। সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে পতেঙ্গার জেলেপাড়া ও সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় এলাকায়। এসব এলাকার জেলেরা ইঞ্জিন নৌকায় সাগরে মাছ ধরার পর তা নিয়ে কূলে আসছেন। চলতি অর্থবছরে শুধু ইলিশ থেকে আয় আশা করা হচ্ছে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি। এসব তথ্য জানিয়েছেন জেলা মৎস্য অফিসের জরিপ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ।
মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ২৭ হাজার। কিন্তু মৎস্য আহরণে পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন কয়েক লাখ। এ বছরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ার কারণে সবাই এর সুফল ভোগ করছেন। গত অর্থবছরে সরকারি হিসাবে ইলিশ ধরা পড়েছিল ৬ হাজার ৮০০ টন, যা টাকার অঙ্কে ২৬৮ কোটি টাকার বেশি। প্রকৃতপক্ষে ইলিশ ধরার পরিমাণ আরও বেশি। টাকার অঙ্কেও তা হবে আরও বেশি। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর ইলিশের আহরণ তুলনামূলক বেড়েছে। এ বছর টাকার অঙ্কে ইলিশের মূল্য ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
জেলা মৎস্য অফিসের জরিপ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, ‘গত অর্থবছরের চেয়ে এ বছর ইলিশ ধরা পড়ছে বেশি। গত অর্থবছর ৬ হাজার ৮০০ টন ধরা পড়েছিল। এ বছর আরও বেশি পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে। ফলে এবার আমরা আশা করছি, ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য বিরাট অবদান।’
চাঁদপুরে প্রতিদিন লেনদেন ৫০ কোটি টাকা : তিনদিন পর অর্থাৎ ৯ অক্টোবর থেকে মা ইলিশ রক্ষা ও তার প্রজনন সময়কে নির্বিঘ্ন করতে চাঁদপুরের নৌসীমানায় সব ধরনের জাল ফেলা নিষিদ্ধ হচ্ছে। তাই শেষ সময়ে দেশের রুপালি ইলিশের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র চাঁদপুর মাছঘাট এখন সরগরম। চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশের আমদানি বেশি হওয়ায় বর্তমানে রাতেও জমজমাট হয়ে উঠেছে এখানকার পাইকারি বাজার। জানা যায়, প্রতিদিন এ মাছঘাটে ৩-৪ হাজার মণ ইলিশ আসছে। আর ইলিশ ঘিরে এখানে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে বলে জানান চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি হাজী আবদুল খালেক মাল। ঘাটের ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের শতাধিক ব্যবসায়ীর প্রায় শত কোটি টাকার উপরে শুধু দাদন হিসেবে ট্রলার মালিক, আড়তদার, জেলেসহ ইলিশ সরবরাহকারীদের কাছে বিনিয়োগ করা আছে। চাঁদপুর মাছঘাট ঘিরে নৌসীমানার দুই শতাধিক আড়ত এবং এর সঙ্গে জড়িত সহস্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারী ও ৫২ হাজার জেলে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাই ইলিশের নগরী চাঁদপুরে অর্থনৈতিক অবস্থাও অনেকটা চাঙ্গা।