কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের অগ্রগতি ৪৬%
বদলে যাবে চট্টগ্রাম
হামিদ-উজ-জামান
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম শহরে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ কাজ এগোচ্ছে দ্রুত। ইতিমধ্যে ৪৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ আগামী সাড়ে তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২২ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি নির্মিত হলে বাংলাদেশ প্রবেশ করবে টানেল যুগে। এতে বদলে যাবে পুরো চট্টগ্রাম শহরের চিত্র। বেড়ে যাবে এর আয়তন। কর্ণফুলী নদীর ওপাড়েও সম্প্রসারিত হবে চট্টগ্রাম শহর। একই সঙ্গে কমে যাবে যানজট। চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির সঙ্গে যোগাযোগও সহজ হবে। এসব কারণে বেড়ে যাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এটি নির্মাণ শেষ হলে চট্টগ্রাম হয়ে উঠবে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। এটিই হবে দেশের প্রথম টানেল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ শনিবার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পের কাজ ভালোভাবেই এগিয়ে চলছে। এখন পর্যন্ত ৪৫ থেকে ৪৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। আমরা আশাবাদী আগামীতে কাজের গতি আরও বাড়বে। তিনি বলেন, এই টানেলটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভিন্ন মাত্রা যোগ হবে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কেন না, এখন ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে চট্টগ্রাম শহরের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু টানেল নির্মাণ শেষ হলে আর যানজটে পড়তে হবে না। এছাড়া আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে টানেলটি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
সূত্র জানায়, এই টানেলের মাধ্যমে এশিয়ান হাইওয়ে হয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হবে। এছাড়া কক্সবাজার, বান্দরবান ও টেকনাফের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারায় ‘চাইনিজ ইকনোমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন’ প্রকল্পটি গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের গতি যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে নতুন কর্মসংস্থানের- যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
সূত্র জানায়, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি সম্ভব না হওয়ায় সম্প্রতি প্রকল্পটি সংশোধনের মাধ্যমে মূল অনুমোদিত ব্যয় থেকে ১ হাজার ৯৪৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ১০ হাজার ৩৯১ কোটি ১০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা এবং মেয়াদ আড়াই বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের ঢাকা সফরে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিচ্ছে। এছাড়া একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শি জিন পিং টানেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনও করেন। কিন্তু এরপরই নানা জটিলতায় আটকে যায় ঋণের অর্থছাড়। ফলে টানেল নির্মাণের মূল কাজে স্থবিরতা তৈরি হওয়ায় যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে সব জটিলতা কেটে গিয়ে চীনা এক্সিম ব্যাংকের অর্থছাড় শুরু হয়েছে। নকশা অনুযায়ী টানেলের শহর প্রান্ত থাকবে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি পয়েন্টে। অপর প্রান্ত থাকবে নদীর পশ্চিম তীরে আনোয়ারার চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার (সিইউএফএল) এলাকায়। পূর্ব প্রান্তে ৫ কিলোমিটার এবং পশ্চিমে এক কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।