Logo
Logo
×

অর্থনীতি

রিগ-ক্রেনে জাগছে মেট্রোরেল

লক্ষ্য আগামী বছরই চালু উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রিগ মেশিন আর বিশাল বিশাল ক্রেনের কর্মযজ্ঞে ধীরে ধীরে জেগে উঠছে স্বপ্ন। আশপাশের অনেক দেশেই বহু বছর আগেই মেট্রোরেল চালু আছে। উন্নত বিশ্বেও মানুষ অনেকটাই মেট্রোরেল নির্ভর। এতদিন বাংলাদেশে যা ছিল স্বপ্ন। অনেক জটিলতা আর বাধা ডিঙ্গিয়ে শেষ পর্যন্ত রাজধানীতে মেট্রোরেল চালু হচ্ছে। এজন্য অনেকদিন অপেক্ষা করতে হবে না। সরকারের আশা আগামী বছরই চালু হবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল। এজন্য দিন-রাত অবিরাম কাজ চলছে।

ইতিমধ্যেই প্রথম পর্বের কার্যক্রম এগিয়েছে অনেক দূর। নির্মাণ এলাকায় ‘বাঁচবে সময়, বাঁচবে তেল, জ্যাম কমাবে মেট্রোরেল’ স্লোগান লেখা সাধারণ মানুষের স্বপ্নকে আরও উসকে দিচ্ছে। প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে সুখবর। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। এছাড়া কয়েক ধাপ পেরিয়ে এখন চলছে সার্ভিস পাইলিংয়ের (মূল এবং শেষ পাইলিং) কাজ। এরপরই তৈরি হবে ভিত্তি। এরই ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে মেট্রোরেলের পিলার ও স্প্যান। এছাড়া উত্তরায় কন্ট্রাক প্যাকেজ-১ এর আওতায় ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ হচ্ছে চলতি মাসেই। তারপরই মাথা তুলবে ডিপোর অবকাঠামো। সরেজমিন উত্তরা, মিরপুর ও আগারগাঁও ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মেট্রোরেল প্রকল্পের সাবেক পরিচালক মোফাজ্জেল হোসেন বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ইউটিলিটি (বিভিন্ন সেবা সংস্থার তার) স্থানান্তরের কাজটি ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। প্রথম ধাপে সেটি সফলভাবে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজও শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, আমি সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ছিলাম মেট্রোরেল নির্মাণ কাজে জনদুর্ভোগ কীভাবে লাঘব করা নিয়ে। কিন্তু এখন মিরপুর-আগারগাঁও এলাকায় মাঝখানে ফেন্সিং করে পরিকল্পিতভাবে কাজ করা হচ্ছে। ফলে জনদুর্ভোগ অনেক কম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ীই কাজ এগিয়ে চলছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মেট্রোরেল প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। অর্থাৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৮৮১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজ এগিয়ে চলছে। কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-১ (মাটির নিচের বিভিন্ন কাজ) এর অগ্রগতি হয়েছে ৫৫ শতাংশ। কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-২ (অবকাঠামো নির্মাণের) এর কাজ চলছে।

বুধ ও বৃহস্পতিবার সরেজমিন মেট্রোরেল নির্মাণ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে রাত অবধি শ্রমিকরা কাজ করছেন। উত্তরায় বিশাল নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে ২২ হেক্টর জমিতে চলছে ডিপো নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। দেশি-বিদেশি কর্মী-শ্রমিকের কাজের শব্দে মুখর এলাকা। এখানে এখন সয়েল ইমপ্র“ভমেন্টের (মাটি উন্নয়ন) কাজ প্রায় শেষ। মাটির ২০-২২ মিটার গভীর পর্যন্ত জাপানি প্রযুক্তির সাহায্যে সিলেটের বালু দিয়ে কম্পাকশন (চাপ দিয়ে সংকোচন) করা হয়েছে। উত্তরায় স্টেশন এলাকায়ও চলছে ব্যাপক কর্মকাণ্ড।

ডিপো এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. শাহজাহান যুগান্তরকে বলেন, চলতি মাসেই শেষ হবে ভূমি উন্নয়নের কাজ। এরপরই তৈরি হবে ডিপোর অবকাঠামোসহ রেল ট্র্যাক, বিভিন্ন অফিস বিল্ডিং এবং ওয়ার্কশপ। তিনি আরও বলেন, ডিপো নির্মাণের কাজ চলছে রাত-দিন শিফট করে। এখানে কর্মীদের জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। আগারগাঁওয়ে গিয়ে দেখা গেছে, পরিসংখ্যান ভবনের সামনের রাস্তা ঘিরে ফেলে চলছে কর্মযজ্ঞ। সেখানে এরই মধ্যে টেস্ট পাইলের কাজ শেষ হয়েছে। বড় বড় রিগ মেশিনের সাহায্যে ৮০ থেকে ১২০ মিটার গভীর পর্যন্ত গর্ত করে চলছে সার্ভিস পাইলিংয়ের কাজ। এখানে কন্ট্রোল রুম, সাইট অফিস, বেসিন প্লান্ট বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯ স্থানে টেস্ট পাইলের কাজ শেষ হয়েছে। টেস্ট পাইলের পরই স্টেশনগুলোতে ফেন্সিং (ঘিরে ফেলে) শুরু করা হয়েছে এ সার্ভিস পাইলিংয়ের কাজ। তবে প্রকৌশলীরা যুগান্তরকে জানান, মিরপুর-১০ নম্বর থেকে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে রাস্তার মাঝখান ঘিরে ফেলার পরিকল্পনা করা হলেও এখনও পুরোপুরি কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। কেননা সিটি কর্পোরেশন বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছপালাগুলো কাটেনি। এগুলো পরিষ্কার হলেই কাজ শুরু হবে। আগারগাঁও মোড়ে তৈরি হচ্ছে শ্রমিকদের আবাসনের জন্য বিশাল বিল্ডিং ও অফিস ভবন। ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চোখে পড়ে এ এলাকায়। মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বরের দিকেও শুরু হয়েছে সার্ভিস পাইলিংয়ের কাজ। সূত্র জানায়, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (মেট্রোরেল) প্রথম অংশ ২০১৯ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। সেভাবেই কাজও এগিয়ে নেয়া হচ্ছিল; কিন্তু গুলশানে হলি আর্টিজান হামলায় ছয় জাপানি প্রকৌশলী নিহত হওয়ায় কাজ মারাত্মক বাধাগ্রস্ত হয়। পরে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা এবং যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই বিদেশিদের প্রকল্পে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এখন পুরো দমে চলছে নির্মাণ কাজ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তরা থেকে মতিঝিল মাত্র ৩৭ মিনিটে যাওয়া যাবে। বর্তমান বাস্তবতায় ঢাকাবাসীর কাছে এটা অলীক স্বপ্ন। কিন্তু ধীরে ধীরে তা এগিয়ে যাচ্ছে বাস্তবায়নের দিকে। বিদ্যুৎচালিত এ রেলে প্রতি ঘণ্টায় উভয় দিকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেট্রোরেল তৈরির মধ্য দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বমানে উন্নীত হওয়ায় ঢাকার যানজটও কমে যাবে। এ ট্রেনের গতি হবে ঘণ্টায় গড়ে ৩২ কিলোমিটার (সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার)। এ রুটে চলাচল করবে ১৪টি ট্রেন। প্রতিটিতে ৬টি করে বগি থাকবে। প্রতি ট্রেনে ৯৪২ যাত্রী বসে এবং ৭৫৪ জন দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে পারবে। প্রতি ৪ মিনিট পরপর ট্রেন ছেড়ে যাবে। সূত্র জানায়, ২০০৮ সাল থেকে মেট্রোরেলের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মেট্রোরেল-৬ এর রুট উত্তরা তৃতীয় পর্যায় থেকে শুরু হয়ে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত। প্রথম পর্যায়ে ২০১৯ সালের মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার বাণিজ্যিক চলাচল শুরু হওয়ার কথা। ২০১৬ সালের ২৬ জুন প্রথম অংশের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে প্রকল্পের কাজ নতুন গতি পায়। ২০২০ সালের মধ্যে বাকি অংশের (মতিঝিল পর্যন্ত) কাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। পুরো ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মেট্রোরেলের রুটে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মোট ১৬টি স্টেশন থাকবে।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম