যমুনা ফিউচার পার্ক, শিল্পপতি নুরুল ইসলামের স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন
দেলোয়ার হুসেন
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২২, ১২:০০ এএম
রাজধানীর কুড়িলে অবস্থিত যমুনা ফিউচার পার্ক শপিংমলটি এখন দেশের মানুষের কেনাকাটা ও বিভিন্ন সেবা নেওয়ার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নতমানের পণ্য কেনার জন্য ভোক্তাদের কাছে এ পার্কের কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে।
কি নেই এখানে! নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্যের সমাহার রয়েছে এই মার্কেটে।
যে কারণে নিন্ম আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত, এমন কি বিদেশি পর্যটক ও ক‚টনীতিকরাও চলে আসেন যমুনা ফিউচার পার্কে তাদের পছন্দের পণ্যটি কিনতে। ভোক্তাদের কাছে যমুনা ফিউচার পার্ক এখন ‘সাশ্রয়ী মূল্যে ভালোমানের পণ্য’ পাওয়া যায় বলে একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।
ব্যতিক্রমী ও চ্যালেঞ্জিং এ উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন করেছেন যমুনা গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান ও শিল্পপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম। তার দূরদর্শী চিন্তা ও স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নের একটি হচ্ছে যমুনা ফিউচার পার্ক। যেটি একটি অভিজাত শপিংমল ও বিনোদনকেন্দ্র হিসাবে দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। বাংলাদেশ তো বটেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় শপিংমল হিসাবেও সুনাম কুড়িয়েছে যমুনা ফিউচার পার্ক।
বাংলাদেশে বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা বড় কোনো প্রতিনিধি সফরে এলে দেশের পণ্য সম্পর্কে পরিচিতি করাতে বা কেনাকাটার জন্য তাদের নিয়ে আসা হয় এ শপিংমলে। শুধু তাই নয়, দেশের লাখ লাখ মানুষের কাছেও সুখ্যাতি রয়েছে এর। পাশাপাশি দেশে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিক, বিদেশি পর্যটক, কূটনীতিকরাও কেনাকাটার জন্য ছুটে আসেন এখানে।
শিল্পপতি নুরুল ইসলামের চিন্তা ও শ্রমে গড়া এ শপিংমলটি এখন বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশকে পরিচিত করানোর অন্যতম একটি আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এখানে রয়েছে বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রায় সব ধরনের পণ্য। কৃষি পণ্য থেকে শুরু করে শিল্প পণ্যের পাশাপাশি বিদেশি অনেক পণ্যের সমাহার রয়েছে এখানে।
বিশাল এ শপিংমলটি শুধু যে কেনাকাটার জন্যই খ্যাতি পেয়েছে তা নয়। এখানে পারিবারিক বিনোদনের জন্য ব্লকবাস্টার সিনেমাসে ৭টি হল রয়েছে। শিশুদের জন্য রয়েছে থিম পার্ক, আছে শরীর চর্চার ব্যবস্থাও। গাড়ি পার্কিং থেকে শুরু করে ব্যাংকিং সেবা, সব ধরনের খাবারের জন্য রয়েছে নানা স্বাদের রেস্টুরেন্টসহ ফাস্টফুডের বিশাল আয়োজন। আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভারতীয় ভিসা সেন্টার। শাক-সবজি, মাছ-মাংস থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী সব ধরনের পণ্যের সমাহারে সাজানো হয়েছে হোলসেল ক্লাব। এটিও এখন ভোক্তাদের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ রয়েছে সব ধরনের নিরাপত্তা। শপিংমলের ভেতরে অনেক প্রশস্ত খালি জায়গা থাকার কারণে ক্রেতারা অনেক স্বস্তি বোধ করেন। যেটি বাংলাদেশের অন্য কোনো শপিংমলে নেই। এছাড়াও আছে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। শপিংমলটি প্রতি বুধবার বন্ধ থাকে। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
রাজধানী ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকুঞ্জ, বিমানবন্দর, উত্তরার একেবারে মাঝখানে কুড়িলে ৪০ একর জায়গাজুড়ে যমুনা ফিউচার পার্কের অবস্থান। ২০০২ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এর বেজমেন্টের নিচে রয়েছে দুটি তলা। এতে গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা রয়েছে। বেজমেন্টের উপরে রয়েছে ৭ তলা। এগুলোতে আছে শপিং, ব্যাংকিং, রেস্টুরেন্ট, বিনোদনকেন্দ্র ও থিম পার্ক। প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে বিস্তৃত প্রতিটি ফ্লোর। প্রতি ফ্লোরে যাতায়াতের জন্য আছে ১১৬টি এসকেলেটর, ৩৪টি প্রশস্ত লিফট। এক অংশ থেকে অন্য অংশে যেতে রয়েছে বিশাল প্রশস্ত খোলা জায়গা। যেগুলো মানুষের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এছাড়াও বিশাল এ শপিংমলে ক্রেতারা কেনাকাটা করতে বা ঘুরে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেলে রয়েছে বসে বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা। আছে কফিশপ। প্রতিটি ফ্লোরেই রয়েছে দেশি-বিদেশি খ্যাতিমান ব্র্যান্ডগুলোর সুবিশাল ও দৃষ্টিনন্দন শোরুম। সব মিলে প্রায় ৯৫০টি শোরুম রয়েছে। এগুলোতে দেশি-বিদেশি নামি-দামি ব্র্যান্ডের সব ধরনের পণ্যের সমাহার মিলবে।
প্রায় ১৬ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত একটি অনন্য স্থাপত্য নকশায় তৈরি চার কোনা ভবনটিতে রয়েছে আধুনিক সব সুবিধা। প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বর্গফুট। চারদিকে থেকে এর ভেতরে প্রবেশ করার জন্য রয়েছে আধুনিক সব ব্যবস্থা। গাড়ি পার্কিং ও পার্কিং থেকে বের হওয়ার সুবিধাও আছে ভবনের সবদিকে। এর ভেতরে রয়েছে ৫টি অষ্টভুজ আকৃতির অলিন্দ। ৭টি উন্মুক্ত চত্বর। যেগুলো দিয়ে সূর্যের আলো সরাসরি পার্কের ভেতরে প্রবেশ করে। এর পাশাপাশি আলোর ঝলকানি তো আছেই।
পারিবারিক বিনোদনের জন্য উপরের ফ্লোরে আছে ব্লকবাস্টার মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল, পারিবারিক বিনোদনকেন্দ্রসহ ৭টি হলরুম। একসঙ্গে প্রায় ৩ হাজার শিশুর খেলাধুলা করার জন্য রয়েছে ইনডোর এবং আউটডোর থিম পার্ক।
এছাড়া বিভিন্ন তলায় রয়েছে শিশুদের খেলার বিভিন্ন ব্যবস্থা। বিভিন্ন অভিজাত শোরুমে আছে শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা। যে কারণে শপিংমলটি শিশুদের কাছেও বেশ প্রিয়। যেজন্য অভিভাবকরা শিশুদের নিয়ে এখানে চলে আসেন ছুটির দিনগুলোসহ অন্য দিনগুলোতেও। অনেকে ফুডকোর্টে জš§দিন, বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান করে থাকেন। কেননা এখানে রয়েছে সব ধরনের আধুনিক খাবারের ব্যবস্থা। আশপাশেই মিলবে ফুলসহ নানা ধরনের উপহারসামগ্রী। যা একেবারে আধুনিক প্যাকিং করে সরবরাহ করা হয়।
ফিউচার পার্কের বিভিন্ন ফ্লোরে থাকা রেস্টুরেন্টগুলোতে একসঙ্গে সাড়ে চার হাজার লোক বসে খাওয়ার মতো ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া আছে আলাদা একটি ফুডকোর্ট। যেখানে দেশি-বিদেশি সব স্বাদের খাবার মিলবে। পার্কের বিভিন্ন ফ্লোরে রয়েছে অনলাইন ব্যাংকিং ও এটিএম বুথ।
বিভিন্ন পণ্যের প্রদর্শনী করার জন্য আছে প্রশস্ত হল। উন্মুক্ত স্থান। এগুলোতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করারও সুযোগ রয়েছে। মূল শপিংমলের বাইরের খোলা প্রান্তরে বিভিন্ন উৎসবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয় বিভিন্ন গ্রুপের পক্ষ থেকে।
শুধু কেনাকাটা ও খেলাধুলাই নয়, এতে আছ জিমনেশিয়াম, সুইমিং পুল ও স্বাস্থ্য ক্লাব। একসঙ্গে এগুলোতে আড়াই হাজার ব্যক্তি স্পা এবং শরীর চর্চার সেবা নিতে পারেন। মহিলা এবং পুরুষদের জন্য রয়েছে দুটি আলাদা সুইমিং পুল।
পার্কের ভেতরে বাইরে নিরাপত্তার জন্য রয়েছে নিজস্ব কর্মী বাহিনী। একটি শক্তিশালী অনলাইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সিসিটিভি ক্যামেরার সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আছে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। গাড়ি চলাচলের জন্য পার্কের চারপাশেই রয়েছে প্রশস্ত সড়ক। এর ভেতরে একসঙ্গে প্রায় ৫ হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। রাখা হয়েছে আন্তর্জাতিকমানের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও। বিভিন্ন উৎসব বা অন্য বিশেষ সময়ে রাতে শপিংমলের ভেতরের পাশাপাশি বাইরেও করা হয় ঝলমলে আলোকসজ্জা।
২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর যমুনা ফিউচার পার্কে চালু করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের স্টাইলে হাইপার মার্কেট ‘হোলসেল ক্লাব’। এর মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে পাইকারি মূল্যে ভেজালমুক্ত বিশ্বমানের নিত্যপণ্য পৌঁছে দিচ্ছে দেশের স্বনামধন্য গ্রুপ অব কোম্পানি যমুনা গ্রুপ। এর মাধ্যমে দেশ-বিদেশের নামি-দামি ব্র্যান্ডের ৫ শতাধিক পণ্য গ্রাহকের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে।
এর আগে ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই যমুনা ফিউচার পার্কে বিশ্বের বৃহত্তম ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।