Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

মিরপুরের দারুস সালাম থানা

পুলিশের ডিউটি ভাগ করে বহিরাগত!

চাঁদা তোলে এক ইন্সপেক্টরের পক্ষে * থানার গোপনীয় তথ্যভান্ডারে প্রবেশাধিকার তার

Icon

ইমন রহমান

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন মো. ওমর ফারুক। এই পরিচয়ে তিনি অভিযান পরিচালনা করেন, আসামি গ্রেফতার করেন, জব্দ করেন মাদকসহ অবৈধ পণ্যের চালান। শুধু তাই নয়, থানায় বসে পুলিশের প্রতিদিনের ডিউটি ভাগ করেন তিনি। ব্যক্তিগত কাজে অফিসারদের গাড়িও ব্যবহার করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের দারুস সালাম থানায় এমন অবিশ্বাস্য ও বিস্ময়কর ঘটনা ঘটছে। থানার একটি সূত্র জানায়, পুলিশ না হয়েও ওমর ফারুক দীর্ঘদিন ধরে থানা পুলিশের ডিউটি ভাগ করছেন। ইন্সপেক্টর (অপারেশন) মো. আসাদুজ্জামানের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে ডিউটি বণ্টনসহ থানা এলাকার অন্তত ২৫টি খাত থেকে চাঁদা তোলেন তিনি। থানায় বসে ফারুকের ডিউটি ভাগ করার ছবি এবং বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদা তোলার অডিও রেকর্ড যুগান্তরের হাতে রয়েছে।

থানার একাধিক উপপরিদর্শক (এসআই) জানান, ফারুক ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামানের মোটরসাইকেল ড্রাইভার হিসাবে পরিচিত। থানা ভবনে তার অবাধ যাতায়াত। আসাদুজ্জামানের কারণে থানার অধিকাংশ গোপনীয় তথ্যভান্ডারে প্রবেশাধিকার রয়েছে ফারুকের। চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত সে। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড বিশ্লেষণ করলে সব প্রমাণ মিলবে। ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান ও ফারুকের এমন কর্মকাণ্ড অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান ও বহিরাগত ওমর ফারুকের এসব অপকর্ম নিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশর অভ্যন্তরীণ তদন্ত শাখা।

অফিসারদের ডিউটি বণ্টন : ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আসাদুজ্জামানের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে ওমর ফারুক ডিউটি বণ্টন করে আসছেন। এর কিছু স্থিরচিত্র যুগান্তরের হাতে এসেছে। তাতে দেখা যায়, একটি কক্ষে চেয়ারে বসে ওমর ফারুক অফিসারদের ডিউটি চার্ট তৈরি করছেন। পুলিশের কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ওমর ফারুক যেখানে বসে ডিউটি চার্ট তৈরি করছেন সেটি দারুস সালাম থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আসাদুজ্জামানের অফিস কক্ষ।

আসাদ-ফারুকের অপকর্মের খতিয়ান : দারুস সালাম থানা পুলিশের চাঁদার রেঞ্জ ২০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামানের নির্দেশ ও পৃষ্ঠপোষকতায় অন্তত ২৫ ধরনের খাত থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা তোলেন ফারুক। থানার ১২টি খাতে চাঁদার তথ্য এসেছে যুগান্তরের হাতে, এসব খাত থেকে চার লাখের বেশি চাঁদা তোলা হয় ফারুকের নেতৃত্বে। চাঁদা তোলা নিয়ে থানার লাইনম্যানের কিছু অডিও রেকর্ডও এসেছে যুগান্তরের হাতে। ফারুকের চাঁদা তোলার বিষয়ে থানার লাইনম্যান রাবেয়াকে বলতে শোনা যায়, ‘ফারুক বলছে, গাড়ির টাকা গাড়িতে দিতে হবে। আমি প্রতিদিন দুই হাজার টাকা দিতে পারুম না। মাসে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে পারুম।’ অপর প্রান্ত থেকে আরেক লাইনম্যান বলেন, ‘ফারুক কে, আমি সরাসরি ইন্সপেক্টর (অপারেশন) স্যারের সঙ্গে কথা কইছি। স্যার বলছে বিষয়টি আমি দেখব।’

এমন আরও কিছু অডিও রেকর্ড রয়েছে যুগান্তরের কাছে। এ বিষয়ে লাইনম্যান রাবেয়া যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার বাবা লাইনম্যান ছিলেন, বাবার মৃত্যুর পর আমি লাইন দেখতেছি।

আপনি সামনা-সামনি আসেন, কথা বলব।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আসাদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘ফারুক এক সময় থানায় আনসারের চাকরি করত। গত ছয় মাস ছুটিতে আছে। এ সময়ে আমি তাকে দিয়ে মাসে কোন অফিসার কতদিন, কোথায় ডিউটি করবে, অর্থাৎ কল সাইনের যে ডিউটি হয় তার আলাদা খসড়া করাতাম। তবে মূল কাজটা আমি করি।’

বহিরাগতকে দিয়ে এসব কাজ করানো আইনের মধ্যে পড়ে কিনা জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আরে ভাই, আইনে তো নিশ্চয় নাই।’ চাঁদাবাজির অডিও রেকর্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো কি শুধু আমারটাই আছে না সবারটাই আছে।’

অভিযোগের বিষয়ে ওমর ফারুক বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি এখন ছুটিতে বাড়িতে আছি।’

ওমর ফারুকের বিষয়ে জানতে চাইলে আনসারের দারুস সালাম থানার পিসি (প্লাটুন কমান্ডার) মো. হারেজ উদ্দিন বলেন, ‘গত সাড়ে পাঁচ মাস আমি দারুস সালাম থানায় দায়িত্বে আছি। এর অনেক আগেই ওমর ফারুক এ থানা থেকে চলে গেছে। কিন্তু এর পরও বিভিন্ন সময় তাকে থানায় দেখেছি। স্যারদের কাছে আসে সে।’

বহিরাগত ব্যক্তি থানার অফিসারদের দায়িত্ব বণ্টনে নিয়োজিত থাকা এবং চাঁদা তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমার জানা নেই। থানার ওসি, জোনাল এসি, এডিসি আছেন, তাদের কাছে জানেন। আমি না জেনে বক্তব্য দিতে পারব না।’ দারুস সালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মফিজুর রহমান পলাশ বলেন, ‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন আকারে অবহিত করা হবে।’ চাঁদা তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম