Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

জিআই স্বীকৃতির অপেক্ষায় রাজশাহীর মিঠা পান

Icon

আনু মোস্তফা, রাজশাহী

প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আম ও পান রাজশাহীর অন্যতম অর্থকরী ফসল। রাজশাহীর পানের ঐতিহ্য দেশজোড়া। বিদেশেও রাজশাহীর পানের চাহিদা বেশি। শত বছর ধরে উৎকৃষ্টমানের পান ফলে রাজশাহীতে। বিশেষ করে রাজশাহীর সাঁচি ও মিঠা পানের খ্যাতি ও চাহিদা রয়েছে সারা দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ফলনের পরিমাণ বিবেচনায় রাজশাহীতে বছরে ৭৭ হাজার ৬৬৮ মেট্রিক টন পান উৎপন্ন হয়। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। আম উৎপাদনের পরিমাণ বেশি হলেও আর্থিক মূল্য বিবেচনায় পানই রাজশাহীর প্রধানতম অর্থকরী কৃষিপণ্য।

জানা যায়, ঐতিহ্যবাহী এ মিঠা পানের জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য) স্বীকৃতি পেতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্পনকশা ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তরে আবেদন করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। বুধবার এ আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। এখন অপেক্ষার পালা।

জেলা প্রশাসক বলেন, রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী এ পানের জিআই স্বীকৃতির জন্য আমরা আবেদন সম্পন্ন করেছি। আমি নাটোরের জেলা প্রশাসক থাকাকালে ঐতিহ্যবাহী কাঁচাগোল্লার জিআই স্বীকৃতির জন্য কাজ করেছি। কাঁচাগোল্লা এখন নাটোরের জিআই পণ্য। আশা করি, রাজশাহীর মিঠা পানেরও জিআই স্বীকৃতি আমরা অর্জন করব। স্বীকৃতি পেলে এ পান আজীবনের জন্য রাজশাহীর নিজস্ব পণ্য হিসাবে দেশে-বিদেশে পরিচিতি পাবে। বিশেষ করে রাজশাহীর মিঠা পানের ব্যাপক চাহিদা বাড়বে।

জিআই স্বীকৃতির জন্য করা আবেদনে বলা হয়েছে, শত বছর ধরে রাজশাহীতে উৎকৃষ্টমানের পান-বিশেষ করে উন্নত জাতের মিঠা পান উৎপন্ন হয়ে আসছে। বংশপরম্পরায় রাজশাহীর বাগমারা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, মোহনপুর ও পবায় পানের চাষ করেন চাষিরা। রাজশাহীর এসব এলাকায় রয়েছে শতবর্ষী পানবরজ। রাজশাহীর কয়েক লাখ মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম অবলম্বন হচ্ছে পান চাষ। রাজশাহীজুড়ে রয়েছে অর্ধ লক্ষাধিক পানবরজ। পানের কারণে রাজশাহীর এসব এলাকায় বেড়েছে সরিষা, বাঁশ, পাট, নালিয়াসহ নানা সহযোগী পণ্যের আবাদ। এতে নানাভাবে রাজশাহীর অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে পান।

জানা যায়, রাজশাহীর মোকামগুলোয় পান বিক্রি হয় ‘পোন’ হিসাবে। চাষিরা জানান, ৬৪টি পানপাতায় হয় এক ‘বিড়া’। আর ৩২ বিড়াতে হয় এক পোন। রাজশাহীর অন্যতম প্রধান পানের মোকাম হচ্ছে মোহনপুরের মৌগাছি ও দুর্গাপুরের আলীপুর বাজার। বর্তমান বাজারে এক পোন পান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। তবে বছরের কোনো সময়েই পানের পোন দুই হাজার টাকার নিচে নামে না। চাষিরা পান বিক্রি করেন নগদে। ফলে দামের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। এক বিঘা বরজে বছরে আনুমানিক চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার পান হয়। আবহাওয়ার তারতম্যে ফলন কমবেশি হয়। তবে একমাত্র বন্যা ও অতিবর্ষণ ছাড়া বরজের বিশেষ ক্ষতি হয় না। কিছু বরজে কাণ্ডপচা রোগের আক্রমণ হয়। একবার পানবরজ করলে তা দশ বছরের বেশি সময় স্থায়ী হয়। তবে মাঝেমধ্যে বরজের বাঁশ-খড়ি বদলাতে হয়। প্রথমবার এক বিঘা পানবরজ করতে দুই-আড়াই লাখ টাকা লাগে।

রাজশাহীর দুর্গাপুরের বখতিয়ারপুর গ্রামের পানচাষি মুক্তার হোসেন জানান, রাজশাহীতে দুই ধরনের পান চাষ হয়-মিষ্টি বা মিঠা পান ও সাঁচি পান। রাজশাহীতে মোট উৎপাদিত পানের ৭০ ভাগই মিঠা এবং এটি চাষিদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ধরন। বাকি ৩০ ভাগ সাঁচি পান। মোহনপুরের চাষি মোকবুল হোসেন জানান, তিনি দুই যুগের বেশি সময় মিঠা পান চাষ করছেন। দেশে মিঠা পানের চাহিদা ও দাম বেশি বলে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হন। বাগমারার চান্দাপুর গ্রামের চাষি মোহাম্মদ আলী পান চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি তার এলাকার প্রথম পানচাষি হিসাবে এ অঞ্চলে খ্যাতি অর্জন করেন।

চাষি আবদুল হামিদ জানান, সারা দেশে রাজশাহীর মিঠা ও সাঁচি পানের চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকা, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রাজশাহীর পানের চাহিদা বাড়ছে। এমনকি রাজশাহীর পান যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। তবে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে সৌদি আরবে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও রাজশাহীর পান রপ্তানি হচ্ছে। চাষিরা জানান, উৎপাদিত পান বিক্রি করতে তাদের এলাকার বাইরে যেতে হয় না। জেলার বাইরের ব্যাপারি ও ব্যবসায়ীরা পান কিনতে রাজশাহীর পানের হাটে আসেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোজদার হোসেন বলেন, জিআই স্বীকৃতি পেলে পান হবে রাজশাহীর জিআই পণ্য। দেশ-বিদেশে এ পণ্যের সুনামের পাশাপাশি চাহিদা বাড়বে। এতে পানচাষিরাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম