ঈশ্বরদী-পাবনা রেলপথ চালু ১৪ জুলাই
উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

শিপন হাবীব
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০১৮, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
স্বাধীনতার পরপরই পাবনার মানুষ যে দাবি জানিয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে, এতদিনে এসে পূরণ হতে চলছে তা। মানুষের ভালোবাসার মর্যাদা দিতে ১৯৭৪ সালে ঈশ্বরদী-পাবনা রুটে রেলপথ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু ’৭৫ পরবর্তীতে সে প্রকল্প আর এগোয়নি। ২০১৩ সালের ২ ফেব্র“য়ারি নতুন করে কাজ উদ্বোধন করেছিলেন তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৪ জুলাই সেই রেলপথ উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি উদ্বোধন করবেন পাবনা-ঈশ্বরদী-রাজশাহী রেলপথে ‘পাবনা এক্সপ্রেস’ নামে নতুন ট্রেনও। আর আনন্দ নিয়ে সেই ক্ষণের অপেক্ষায় রয়েছে পাবনাবাসী।
রেলপথ সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন যুগান্তরকে জানান, ১৪ জুলাই পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে জনসমাবেশ থেকে নতুন এ রেলপথ ও ট্রেনের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে আমরা সমাপ্ত হওয়া প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছি। তিনি বলেন, ঈশ্বরদী-পাবনা-রাজশাহী রেলপথে ভ্রমণের পাশাপাশি দ্রুতই রেলপথে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতে পারবে এলাকাবাসী। এ পথ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সরঞ্জাম আনা নেয়াতেও ভূমিকা রাখবে।
রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন যুগান্তরকে জানান, জনসমাবেশ শেষে রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক পাবনা রেলস্টেশনে অবস্থান করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী হুইসেল বাজিয়ে নতুন ট্রেনটি চালু করবেন। তিনি বলেন, এ লাইন নির্মাণে অনেক আবেগ ভালোবাসা মোড়া রয়েছে, রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরাও তা অনুভব করেন। রেলপথমন্ত্রীর নির্দেশনায় পাবনা-ঢাকা সরাসরি ট্রেন সার্ভিসও যত দ্রুত সম্ভব চালু করা হবে।
ঈশ্বরদী-পাবনা রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক মো. আসাদুল হক যুগান্তরকে জানান, আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। এরই মধ্যে এ লাইন দিয়ে নির্ধারিত গতিতে সফলভাবে ট্রেন চালানো হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে। এক হাজার ৬২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার রেললাইন ও স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ হয় কয়েক মাস আগে। এ লাইনে ১১টি স্টেশন, ১১৩টি ছোট-বড় রেলসেতু, ৫২টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এক হাজার ১৪ দশমিক ২১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরিচালক জানান, উদ্বোধনের দিন থেকেই এ লাইনে ৪২৩টি আসন নিয়ে ‘পাবনা এক্সপ্রেস’ ঈশ্বরদী-পাবনা-রাজশাহী-পাবনা-ঈশ্বরদীতে চলাচল করবে।
রেলওয়ে বাণিজ্যিক বিভাগ থেকে জানা যায়, ১৪ জুলাই থেকে প্রতিদিন ভোর পৌনে ৬টায় ঈশ্বরদী থেকে ব্রডগেজের ‘পাবনা এক্সপ্রেস’ পাবনার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। আবার সকাল সোয়া ৭টায় দ্বিতীয় ট্রেনটি পাবনা থেকে ঈশ্বরদীর উদ্দেশে ছেড়ে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে বাইপাস রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছবে। এ স্টেশন থেকে ট্রেনটি রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে সকাল সাড়ে ৯টায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছবে।
তৃতীয় ট্রেনটি বিকাল সোয়া ৫টায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনে পৌঁছবে। ২ মিনিট বিরতি শেষে এ স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে পাবনা রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছবে। এসি ও শোভন চেয়ার আসন থাকছে এতে। টেবুনিয়া, দাশুরিয়া, মাঝগ্রাম, ঈশ্বরদী, ঈশ্বরদী বাইপাস, আজিমনগর, আবদুল্লাহপুর, লোকমানপুর, আড়ানি, নন্দনগাছী, সরদহ রোড, বেলপুকুর, হরিয়ান, রাজশাহী স্টেশন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশনে বিরতি দেবে ট্রেনটি।
পাবনা পৌরসভার মেয়র মো. কামরুল হাসান মিন্টু যুগান্তরকে বলেন, আমরা গর্বিত, আনন্দিত। বাবা দাদাসহ আমরা বছরের পর বছর দাবি জানিয়ে আসছিলাম এ রেলপথ নির্মাণের। বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন, কিন্তু হায়েনারা তাকে বাঁচতে দেয়নি। তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা বাস্তবায়ন করেছেন। আমরা অধীর আগ্রহে বসে আছি কখন প্রধানমন্ত্রী আসবেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাই, এ লাইন হয়ে যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাবনা-ঢাকা সরাসরি ট্রেন চালুর ঘোষণাও তিনি দেন।