Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

সাক্ষাৎকার: ইসলামী ব্যাংকের এমডি

ফিরছে বের হওয়া আমানত

Icon

হামিদ বিশ্বাস

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফিরছে বের হওয়া আমানত

সাম্প্রতিক সময়ে নানা গুজবে ব্যাংক খাত থেকে যে টাকা তোলার হিড়িক পড়েছিল, সেই টাকা ফিরতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার আমানত ফেরত এসেছে। ধীরে ধীরে বাকি টাকাও চলে আসবে। ব্যাংকটি ৪০ বছরে পদার্পণ করছে আজ। যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ দীর্ঘ সময়ে ব্যাংকের সাফল্যের কাহিনি তুলে ধরেছেন ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-হামিদ বিশ্বাস

যুগান্তর : ইসলামী ব্যাংকের অগ্রযাত্রা প্রসঙ্গে জানতে চাচ্ছি।

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা : ১৯৮৩ সালে দেশের প্রথম শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক হিসাবে কার্যক্রম শুরু করে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল)। এরপর থেকে দেশে প্রচলিত ধারার ব্যাংকের পাশাপাশি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের প্রসার ঘটতে থাকে। বর্তমানে ১০টি পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক রয়েছে। এছাড়া প্রায় সব ব্যাংক প্রচলিত ধারা ব্যাংক ব্যবসার পাশাপাশি শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডো বা ইসলামি ব্যাংকিং শাখা চালু করেছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের অংশীদারত্ব বাড়ছে। ইসলামী ব্যাংক একের পর এক নতুন সাফল্য নিয়ে আসছে। ব্যাংকটি আমানত, বিনিয়োগ, আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স আহরণ, শিল্পায়ন, এসএমই বিনিয়োগ, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, পল্লি উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও নারীর ক্ষমতায়নসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে অনুস্মরণীয় হয়ে উঠেছে। জাতীয় প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের অংশীদার ইসলামী ব্যাংক রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অন্যতম বৃহৎ করদাতা।

যুগান্তর : রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষস্থান কীভাবে অর্জন করলেন?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা : দেশের এক-তৃতীয়াংশের বেশি রেমিট্যান্স আহরণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে ইসলামী ব্যাংক। ২০২২ সালে ইসলামী ব্যাংক আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য এবং রেমিট্যান্স আহরণ করেছে যথাক্রমে ৭৫ হাজার ৪০৪ কোটি, ৩৬ হাজার ৯৬৩ কোটি এবং ৪৫ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৪০ বছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এসেছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স আহরণের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান ও সিঙ্গাপুরে ৩১ জন প্রতিনিধির মাধ্যমে কাজ করছে ইসলামী ব্যাংক। বিশ্বের ৫৯৪টি করসপনডেন্টস ব্যাংকের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য স¤পর্ক রয়েছে। এছাড়া ১৫৫ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের রেমিট্যান্স সংগ্রহের চুক্তি রয়েছে। প্রবাসীদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত। রেমিট্যান্সের প্রায় ৫৪ শতাংশই মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসে। এসব দেশ থেকে বাংলাদেশে আগে টাকা পাঠানোর সহজ, নিরাপদ ও দ্রুত উপায় না পেয়ে অবৈধ পথে পাঠাতেন। ইসলামী ব্যাংক ওইসব দেশ থেকে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর কাঠামো তৈরি করে নিয়মিত বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে প্রবাসীদের সচেতন করে।

যুগান্তর : ব্যাংকটির আমানত কত?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা : জনগণের অর্থের বিশ্বস্ত আমানতদার ইসলামী ব্যাংক। বর্তমানের ব্যাংকের আমানত ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার বেশি। সঞ্চয়ের মানসিকতা তৈরি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কর্মমুখী জীবনের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে দেশের প্রতিটি পরিবারের প্রয়োজন পূরণে কাজ করছে এই ব্যাংক।

যুগান্তর : গ্রাহক সংখ্যা কেমন?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা : বর্তমানে ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। এই ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা দেশের ব্যাংকিং খাতের শীর্ষে। গ্রাহকদের অবিচল আস্থা, ভালোবাসা ও সহযোগিতার ফলেই ইসলামী ব্যাংক আজকের এই অবস্থানে।

যুগান্তর : অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিল্পায়নে ব্যাংকের ভূমিকা সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা : দেশের ৬ হাজারের বেশি শিল্পকারখানা ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। এসএমই খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছি আমরা। কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, আঞ্চলিক বৈষম্য কমানো, নারীর ক্ষমতায়ন, সর্বোপরি সুষম-টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ইসলামী ব্যাংক এসএমই খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশের আবাসন বিনিয়োগে ব্যাংকের মার্কেট শেয়ার ১০ শতাংশের বেশি। এ খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ১২ লাখ মানুষের আবাসন নিশ্চিত হয়েছে। পরিবহণ খাতের মোট বিনিয়োগের প্রায় ১৮ শতাংশ ইসলামী ব্যাংকের। ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত রেজিস্টার্ড যানবাহনের সংখ্যা বর্তমানে অর্ধলক্ষাধিক।

যুগান্তর : পল্লি উন্নয়নে আইবিবিএল-এর বিনিয়োগ কেমন?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা : ইসলামী ব্যাংক ১৯৯৫ সালে পল্লি উন্নয়ন প্রকল্প (আরডিএস) চালু করে। এ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি, দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, সঞ্চয় গঠন, বিভিন্ন আয়-উৎসারী কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ কার্যক্রম রয়েছে। শহর এলাকার বস্তিবাসীসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ২০১২ সাল থেকে ‘নগর দরিদ্র উন্নয়ন প্রকল্প’ কাজ করছে। ৩২ হাজার গ্রামে বিস্তৃত এ প্রকল্পের সদস্য ১৬ লাখ। যার ৯৪ শতাংশই নারী।

যুগান্তর : ব্যাংকি সেবায় আপনাদের পুরস্কার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা : যুক্তরাজ্যের ব্যাংকিং বিষয়ক বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘দ্য ব্যাংকার’-এর মূল্যায়নে ইসলামী ব্যাংক ২০১২ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১ হাজার ব্যাংকের তালিকায় বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাংক হিসাবে স্থান পেয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় টানা ১২ বার ইসলামী ব্যাংক বিশ্বের শীর্ষ ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে। বর্তমানে এ তালিকায় ব্যাংকের অবস্থান ৮৮২তম। বিশ্বসেরা ইসলামিক ব্যাংক সিবাফি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইসলামী ব্যাংক। ট্যাক্স কার্ড সম্মাননা ২০২২, আইসিএসবি গোল্ড অ্যাওয়ার্ড, আইসিএমএবি বেস্ট করপোরেট গোল্ড অ্যাওয়ার্ডসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা স্বীকৃতি অর্জন করেছে ইসলামী ব্যাংক।

যুগান্তর : কৃষি খাতে বিনিয়োগে ব্যাংকের গুরুত্ব কেমন?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা : ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে গড়ে উঠেছে দুই হাজারের বেশি কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ২৬টি পাটকল পরিচালিত হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত পাটজাত পণ্যের ১৭ শতাংশের বেশি উৎপাদিত হয় ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোয়। বেসরকারি পর্যায়ে সার আমদানিতে ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়ন সর্বোচ্চ। পচনশীল কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য অর্ধশতাধিক কোল্ড স্টোরেজে অর্থায়ন করেছে। ব্যাংকের অর্থায়নে স্থাপিত হয়েছে ৮৫২টি অটো রাইস মিল। দেশের প্রথম অটো রাইস মিল ও ব্রান অয়েল মিল (ধানের তুষ থেকে ভোজ্যতেল কারখানা) স্থাপনে প্রথম অর্থায়ন করেছে ইসলামী ব্যাংক।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম